ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে মুখর হচ্ছে সাপাহারের আমবাজার

ঝুড়িভর্তি আম নিয়ে বিক্রির জন্য অপেক্ষা করছেন চাষিরা। রোববার দুপুরে নওগাঁর সাপাহার আমবাজার
ছবি: প্রথম আলো

দেশের অন্যতম আম উৎপাদনকারী জেলা নওগাঁর সবচেয়ে বড় আমবাজার সাপাহার। কয়েক দিন আগেও আমশূন্য ছিল বাজারটি। তবে সেই সাপাহার আমবাজারে এখন উল্টো চিত্র।

২২ মে থেকে বাজারটিতে গুটি বা আঁটির আম এবং রোববার থেকে পাওয়া যাচ্ছে সুমিষ্ট গোপালভোগ আম। ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে সরব হয়ে উঠতে শুরু করেছে এ আমবাজার।

আজ দুপুরে সাপাহার আমবাজারে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা সদরের জিরো পয়েন্ট এলাকা থেকে সাপাহার-নজিপুর সড়কের পাশে ভ্যানভর্তি আম নিয়ে বিক্রির জন্য অপেক্ষা করছেন চাষিরা। জিরো পয়েন্ট থেকে গোডাউনপাড়া পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সড়কের দুই পাশে আমের দুই শতাধিক আড়ত বসেছে। দরদাম ঠিক হওয়ার পর এসব আড়তে আম বিক্রি করছেন চাষিরা।

সাপাহার জিরো পয়েন্টের রাস্তার একপাশে ভ্যানভর্তি আম নিয়ে বিক্রির জন্য অপেক্ষা করছিলেন সোহেল হোসেন। নওগাঁর পত্নী উপজেলার দিবর গ্রাম থেকে দুটি ভ্যানে করে আট মণ গোপালভোগ আম নিয়ে এসেছেন তিনি।

সোহেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েকজন আড়তদার এসে দাম করে গেছেন। ১ হাজার ৫০০ টাকা মণ পর্যন্ত দাম উঠেছে। আর এক-দেড় শ টাকা বেশি দাম পেলে সব আম বিক্রি করে দেব।’ তিনি জানান, গত বছর এ সময়ে গোপালভোগ আম ১ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছিল। সেই তুলনায় এবার দাম কম।

সোহেলের মতো আশপাশে ভ্যানভর্তি গোপালভোগ আম নিয়ে বিক্রির জন্য অপেক্ষা করছিলেন আরও কয়েক বিক্রেতা। তাঁরাও আমের দাম নিয়ে অসন্তুষ্ট। এ ছাড়া এবারও প্রশাসনের মধ্যস্থতায় আমচাষি ও আড়তদার সমিতির সিদ্ধান্তে ৪৮ কেজিতে মণ ধরে আম বিক্রি করতে হচ্ছে বলে অখুশি তাঁরা।

পোরশার শিবপুর এলাকা থেকে গোপালভোগ আম নিয়ে এসেছিলেন সাইফুল ইসলাম নামের এক চাষি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘১ হাজার ৫৬০ টাকা মণ দরে চার মণ আম বিক্রি করলাম। গতবারের তুলনায় এবার দাম কম। তার ওপর ১ মণ আমে ৮ কেজি করে বেশি নিল আড়তদার। একে তো দাম কম, তার ওপর এই অবস্থা। যত ক্ষতি চাষিদের।’

সাপাহার আমবাজার আড়তদার সমিতির সভাপতি কার্তিক সাহা বলেন, এবার তাঁদের বাজারে ২৩০টি আড়ত বসেছে। এখন প্রতিদিন ৪০০-৫০০ মণ আম উঠছে। তবে ল্যাংড়া, আম্রপালি আম এলে প্রতিদিন ২০-৩০ হাজার মণ আম বাজারে উঠবে। তখন তাঁদের দম ফেলার সময় থাকবে না।

এক মণ আমে আট কেজি করে বেশি নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কার্তিক সাহা বলেন, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের সব আমবাজারে ঢলন (মণে আট কেজি বেশি) নেওয়া হয়। এখানেও নেওয়া হচ্ছে। কাঁচামাল সব সময় কিছু নষ্ট হয়। এ জন্য তাঁরা ক্যারেটসহ ৪৮ কেজি মণ হিসেবে আম কিনছেন। তাঁরা নিজেরাও পাইকারদের কাছে ৪৫ কেজি মণ দরে আম বিক্রি করেন।

প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা অনুযায়ী, এ মৌসুমে ২২ মে গুটি জাতের আম, ২৮ মে থেকে গোপালভোগ, ২ জুন ক্ষীরশাপাতি/হিমসাগর, ৭ জুন নাক ফজলি, ১০ জুন ল্যাংড়া ও হাঁড়িভাঙা, ২০ জুন ফজলি, ২২ জুন আম্রপালি ও ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা, বারি আম-৪, গৌড়মতি ও কাটিনা আম বাজারজাত করা যাবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ বছর নওগাঁয় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১২ দশমিক ৬ মেট্রিক টন হিসেবে জেলায় আম সংগ্রহের মোট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার মেট্রিক টন।

এবার জেলায় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার ওপরে আমের বাণিজ্য হতে পারে বলে ধারণা করছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দেশের মধ্যে এবার নওগাঁয় সবচেয়ে বেশি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এবার আমের মৌসুমে ঝড়ঝাপটা কম হয়েছে। রোগবালাইও কম। আশা করা হচ্ছে, লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।