কোন্দলে হচ্ছে না সম্মেলন

গত বছরের ৯ মে ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। পরে তা পেছানো হয় ২১ নভেম্বর। কিন্তু ওই দিনও সম্মেলন হয়নি।

মোয়াজ্জেম হোসেন ও শামীম আহমেদ

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ ত্রিবার্ষিক সম্মেলন ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত হয়। এরপর আর সম্মেলন হয়নি। এদিকে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে উপজেলার নেতা-কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে দুই ভাগে বিভক্ত। এ অবস্থায় উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

নেতা-কর্মীরা বলেন, ৬৭ সদস্যের উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির বিভিন্ন পদে থাকা ১৩ জন মারা গেছেন। গত বছরের ৯ মে উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। পরে তা পেছানো হয় ২১ নভেম্বর। কিন্তু ওই দিনও সম্মেলন হয়নি।

এরপর আর সম্মেলন হওয়ার কোনো তারিখও দেওয়া হয়নি। এদিকে দলের নেতা-কর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত। এক পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন উপজেলা সভাপতি ও সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন। অপর পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ ওরফে মুরাদ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বলেন, মেয়াদ শেষ হওয়ার পাঁচ বছর পরও সম্মেলন হয়নি। দলে রয়েছে বিভক্তি। দুই দফায় সম্মেলনের তারিখ পেছানোর কারণে নেতা-কর্মীরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ। সম্মেলন না হওয়ায় সাংগঠনিক কাজকর্মে স্থবিরতা বিরাজ করছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ২০১৪ সালের ১০ নভেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেনকে সভাপতি ও শামীম আহমেদ ওরফে বিলকিসকে সাধারণ সম্পাদক করে ৬৭ সদস্যবিশিষ্ট উপজেলা কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন মোয়াজ্জেম হোসেন। অপর অংশের নেতৃত্বে ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আলমগীর কবীর ও শামীম আহমেদ ওরফে বিলকিস।

নেতা-কর্মীরা বলেন, ২০১৬ সালের আগস্ট পর্যন্ত দুই পক্ষ আলাদাভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। তবে শামীম আহমেদ ওরফে বিলকিস ওই বছর মোয়াজ্জেমের পক্ষে যোগ দেন। তখন আলমগীর কবীরের সঙ্গে অপর পক্ষের হাল ধরেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফখরুল ইসলাম চৌধুরী। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন চলাকালে ফখরুলও সংসদ সদস্যের পক্ষে চলে যান। এরপর অপর পক্ষের নেতৃত্বে চলে আসেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মোকাররম হোসেন।

দলীয় নেতা-কর্মীরা আরও বলেন, ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হন শামীম আহমেদ ওরফে মুরাদ। তাঁর বিপক্ষে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন সংসদ সদস্যের ছোট ভাই ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন। নির্বাচনে মোজাম্মেল জয়ী হন। এরপর আলমগীর কবীরের পক্ষে যোগ দেন শামীম আহমেদ ওরফে মুরাদ।

২০২০ সাল আলমগীর কবীর মারা যান। তখন এ পক্ষের হাল ধরেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রফিকুল হাসান চৌধুরী। কিন্তু ২০২২ সালে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন চলাকালীন সাংগঠনিক কার্যক্রমে কিছুটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন রফিকুল হাসান চৌধুরী। এ অবস্থায় তাঁদের পক্ষে যোগ দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল হাই তালুকদার।

শামীম আহমেদ ওরফে মুরাদ পক্ষের সমর্থক এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক জুবায়ের পাশা বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের নিজের পক্ষে টেনে এনে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে বসিয়েছেন। এতে আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা-কর্মীরা পদবঞ্চিত হয়েছেন। এ ছাড়া গত উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরোধিতাও করেছেন। তিনি সভাপতি পদে থাকায় তাঁদের দলের অবস্থা খুবই নাজুক হয়ে পড়েছে।

সংসদ সদস্যের পক্ষের উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান বলেন, সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে দায়িত্ব নেওয়ার পর নেতা-কর্মীরা আগের চেয়ে বেশি কর্মচঞ্চল। সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে গত উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরোধিতা করার অভিযোগ ভিত্তিহীন।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নোমান বখত পলিন বলেন, যেসব উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে সেখানে দ্রুত সম্মেলন করা হবে। জেলায়  কোথাও আর কোনো কোন্দল থাকবে না।