খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে নেচেগেয়ে শিক্ষার্থীদের ‘বিজয়’ মিছিল
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি পূরণ হওয়ায় ক্যাম্পাসে বিজয় মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ক্যাম্পাসের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সামনে নেচেগেয়ে উল্লাস প্রকাশের পর কয়েক শ শিক্ষার্থী এই মিছিলে অংশ নেন।
মিছিলে নারী শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। মিছিল শুরুর আগে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে করে মাইক নিয়ে বিভিন্ন হল ঘুরে শিক্ষার্থীদের মিছিলে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। বিকেল চারটা নাগাদ বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে জড়ো হন। অনেকের হাতে ছিল জাতীয় পতাকা ও বিভিন্ন স্লোগান–সংবলিত প্ল্যাকার্ড। কারও কারও হাতে ফিলিস্তিনের পতাকা দেখা যায়।
মিছিল শুরুর আগে একজন শিক্ষার্থী মাইকে ঘোষণা করেন, শিক্ষকদের নামে কোনো আপত্তিকর স্লোগান দেওয়া হবে না। এই মিছিলের একটি ইতিবাচক বার্তা পৌঁছানোর বিষয়েও তিনি সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানান।
বিকেল পাঁচটার দিকে স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টার থেকে শুরু হওয়া বিজয় মিছিলটি ক্যাম্পাসের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা ‘তুমি কে আমি কে, কুয়েটিয়ান কুয়েটিয়ান’, ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’, ‘আমার সোনার বাংলায়, স্বৈরাচারের ঠাঁই নাই’, ‘জিতেছে রে জিতেছে, ছাত্রসমাজ জিতেছে’, ‘রাজনীতির ঠিকানা এই কুয়েটে হবে না’, ‘সন্ত্রাসীদের ঠিকানা এই কুয়েটে হবে না’, ‘পালাইছে রে পালাইছে’, ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’, দালালের গতিতে আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘স্বৈরাচারের গতিতে আগুন জ্বলে একসাথে’ এসব স্লোগান দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের একটি দাবি পূরণ হয়েছে। তবে কুয়েটের আরও সংস্কার প্রয়োজন। সেই লক্ষ্যে সব শিক্ষার্থী ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে। তিনি বলেন, এই আন্দোলনের কোনো একক নেতৃত্ব ছিল না। বরং সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই বিজয় অর্জিত হয়েছে।
উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশনরত শিক্ষার্থীরা প্রায় ৫৮ ঘণ্টা পর গতকাল বুধবার দিবাগত রাত একটার দিকে কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান তাঁদের জুস পান করিয়ে অনশন ভাঙান।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন দুপুরে সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবিতে ১৩ এপ্রিল বিকেল থেকে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। এরপর ১৪ এপ্রিল রাতে সিন্ডিকেট সভায় সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই ঘটনার জেরে গত রোববার উপাচার্যের পদত্যাগের ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়।
গতকাল দুপুরে আরেকটি সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গতকাল বিকেল থেকে ছাত্রদের ছয়টি ও ছাত্রীদের একটি হল আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয়। সভায় আগামী ৪ মে থেকে ক্লাস শুরু করার আগের সিদ্ধান্তটি বহাল রাখা হয়।