কয়রায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নিয়োগ
আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে নিয়োগ কমিটির সদস্যকে পিটিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়ার অভিযোগ
খুলনার কয়রা উত্তরচক আমিনিয়া বহুমুখী কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের প্রতিনিধি এক অধ্যাপককে মারধর করে নিয়োগের কাগজে জোর করে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মাহমুদের বিরুদ্ধে।
আবদুল্লাহ আল মাহমুদ মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক।
মারধরের শিকার ওই অধ্যাপকের নাম নজরুল ইসলাম। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক। ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি অধ্যক্ষ পদের নিয়োগ পরীক্ষা নিতে কয়রায় এসেছিলেন। আহত অবস্থায় ওই অধ্যাপককে প্রথমে কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কয়রা উত্তরচক আমিনিয়া বহুমুখী কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পরীক্ষা ছিল গতকাল। নিয়োগ বিধি অনুযায়ী তিনি সেখানে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অধ্যক্ষ পদের লিখিত পরীক্ষায় ১৪ জনের মধ্যে ৬ জন অংশ নেন। তবে কেউ উত্তীর্ণ হননি। এরপরও আবদুল্লাহ আল মাহমুদ তাঁর পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে চাপ দেন। তখন তিনি তাঁকে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান।
নজরুল ইসলাম আরও বলেন, কার্যক্রম শেষে তিনি ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের প্রতিনিধি মো. জিয়াউল আহসান গাড়িতে করে ফিরছিলেন। গাড়িটি ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনে পৌঁছালে হঠাৎ চেয়ারম্যান ও তাঁর লোকজন তাঁদের গতিরোধ করেন। গাড়ি থামানোর সঙ্গে সঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান তাঁকে থাপ্পড় দিয়ে মুঠোফোনটি কেড়ে নেন। এ সময় মো. জিয়াউল আহসান ইউপি চেয়ারম্যানের কথামতো নিয়োগের কাগজে স্বাক্ষর করে চলে যান। তিনি রাজি না হওয়ায় ইউপি চেয়ারম্যানের লোকজন কিলঘুষি মারতে মারতে তাঁকে গাড়ি থেকে নামিয়ে চেয়ারম্যানের বাড়িতে একটি কক্ষে আটকে রাখেন। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা নির্যাতনের পর জোর করে নিয়োগের কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়ে তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠিয়ে দেন।
অভিযোগের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা শেষে ওই অধ্যাপক তাঁর বাড়িতে নাশতা করতে এসেছিলেন। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। তিনি আরও বলেন, ‘আমি মাদ্রাসাটির সভাপতি হওয়ার পর একটি পক্ষ আমাকে মেনে নিতে পারেনি। এমনকি অধ্যক্ষ নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করতে স্থানীয় সংসদ সদস্যকেও ব্যবহার করে ডিও লেটার দেওয়া হয়েছে। এটিও ওই ষড়যন্ত্রের অংশ।’
কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সুজিত কুমার বৈদ্য বলেন, আহত অধ্যাপককে রাতেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তাঁর শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে।
মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের প্রতিনিধি মো. জিয়াউল আহসান বলেন, নিয়োগ নিয়ে মাদ্রাসার সভাপতির সঙ্গে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের প্রতিনিধির কথা–কাটাকাটি হতে দেখেছেন। তবে তিনি তিনি বিকেলে চলে আসেন। পরে শুনেছেন, মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির বাড়িতে ওই প্রতিনিধিকে মারধর করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মমিনুর রহমান বলেন, অধ্যাপককে মারধরের খবর পেয়ে তিনি তাঁকে দেখতে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। তাঁর অবস্থা দেখে দ্রুত তাঁকে খুলনা মেডিকেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ বি এম এস দোহা বলেন, এ ঘটনায় অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খুলনার জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন বলেন, অধ্যাপক নজরুল ইসলামের ওপর হামলার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। বিষয়টি তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি এসেছিলেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের ব্যবস্থা করা হবে বলে তিনি জানান।
এর আগে ২০২২ সালের ২১ মার্চ সন্ধ্যায় ইউপি সচিব ইকবাল হোসেনকে তাঁর বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে পরিষদের কক্ষে আটকে রেখে পিটিয়ে আহত করেছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান ও তাঁর লোকজন। এ ঘটনায় ইউপি সচিব বাদী হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মারধরের মামলা করছিলেন। তখন পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মাহমুদ।