চন্দ্রায় সকালে ৩ ঘণ্টা যানজট, পরে স্বাভাবিক

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। রোববার সকাল ১১টায় গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকায়ছবি: মাসুদ রানা

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় সড়ক ও জনপথ নতুন করে সড়ক বিভাজক নির্মাণ করায় উত্তরবঙ্গের ঘরমুখী মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এটি তাদের ভুল সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন ওই পথে চলাচলকারী এবং দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা।

এদিকে আজ রোববার সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহনের বেশ চাপ বেড়েছে। যানবাহনের চাপের কারণে সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত প্রায় ৩ ঘণ্টা যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে হাইওয়ে পুলিশের সহায়তায় ১০টার পর থেকে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যায়। এ ছাড়া ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে সকাল থেকে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক আছে।

হাইওয়ে পুলিশ ও পরিবহন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় প্রতিবছরই দুই ঈদে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হতো। সেই যানজট নিরসন করতে সেখানে নির্মাণ করা হয় উড়ালসড়ক। সেখানে উড়ালসড়ক নির্মাণ করায় যানজট অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে যায়। উড়ালসড়কটি দিয়ে জয়দেবপুরের দিক থেকে টাঙ্গাইলের দিকে এবং টাঙ্গাইলের দিক থেকে জয়দেবপুরের দিকে যাতায়াতকারীরা সহজেই চলে যেতে পারছেন। আর সাভারের নবীনগরের দিকে যেসব গাড়ি চলাচল করে, সেগুলো নিচ দিয়ে যাতায়াত করছে।

কিন্তু উড়ালসড়ক নির্মাণ করায় পশ্চিম পাশে ভাতারিয়া আঞ্চলিক সড়কের পাশে জায়গা কম থাকায় সেখানে কয়েক বছর ধরে ঈদের সময় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সেখানে কখনো কখনো যানজট চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হয়ে যায়। ওই স্থানে সড়ক প্রশস্ত না করে কয়েক দিন আগে সড়ক ও জনপথ বিভাগ একটি সড়ক বিভাজক নির্মাণ করে একটি সাবলেন তৈরি করে। উত্তরবঙ্গগামী যেসব গাড়ি চন্দ্রা এলাকা থেকে যাত্রী ওঠাবে বা নামাবে, তারা ওই লেন দিয়ে চলাচল করবে। কিন্তু বেশির ভাগ পরিবহন ওই লেন ব্যবহার না করে সরাসরি লেন দিয়ে চলাচল করছে। সামনের দিকে গিয়ে তারা সরাসরি যাওয়ার লেনে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠাচ্ছে ও নামাচ্ছে। এতে সেখানে যানবাহন চলাচলে ধীরগতি হয়ে দীর্ঘ সারি হয়ে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে কথা বলতে গাজীপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার মো. শরীফুল আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ধরেননি।

চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকার শ্যামলী পরিবহনের সুপারভাইজার মো. আসলাম মিয়া বলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা উড়ালসড়কের পশ্চিম পাশে ভাতারিয়া আঞ্চলিক সড়কের মাথায় আগে সামান্য যানজট হতো। এখন সড়ক বিভাজক তৈরি করায় উত্তরবঙ্গের বাসগুলো সরাসরি লাইনের ওপর দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানোর কাজ করায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা দাবি জানিয়েছিলাম উড়ালসড়ক অতিক্রম করার পর সড়ক বিভাজকের কিছু অংশ ফাঁকা রাখার, যাতে যাত্রী ওঠানোর জন্য বা নামানোর জন্য বাসগুলো বাঁয়ের লেনে চলে আসতে পারে। কিন্তু সড়ক ও জনপথের লোকজন আমাদের কথা শোনেনি। এখন সেই ফল ভোগ করতে হচ্ছে।’
চন্দ্রা নূরুল ইসলাম স্পিনিং কারখানার সামনে নির্মাণ করা হয়েছে ফুটওভার ব্রিজ। সেই ব্রিজের নিচে সড়কের মাঝে দাঁড়িয়ে ছিলেন কারখানার শ্রমিক মকবুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘ছুটিতে গ্রামের বাড়ি রংপুরে যাচ্ছি। অনেক সময় বসেছিলাম কাউন্টারে, কিন্তু বাস মাঝের সরাসরি লেন দিয়ে চলে যাচ্ছে। তাই সড়কের মাঝে দাঁড়িয়ে আছি বাসে ওঠার জন্য।’

অপর যাত্রী পারভীন আক্তার বলেন, ‘বাসগুলো কাউন্টারে থামলে আমরা সুন্দরভাবে উঠতে পারতাম। এখন বাস এলে দৌড়ে মাঝে গিয়ে বাসে উঠতে হচ্ছে। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে।’

স্থানীয় লোকজন ও হাইওয়ে পুলিশ জানায়, গত বৃহস্পতিবার থেকেই ঈদের যাত্রা শুরু হয়েছে। ঘরমুখী মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদ করার জন্য গ্রামের বাড়িতে ছুটে যাচ্ছেন। গত তিন দিন তেমন কোনো যানজট হয়নি, তবে সড়কে যানবাহন ও ঘরমুখী মানুষের চাপ অনেক বেড়েছে। আজ ভোর থেকে যানবাহনের চাপ আরও বেড়ে গেছে। যানবাহনের চাপের কারণে সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত প্রায় ৩ ঘণ্টা  যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে যানজট নিরসনের চেষ্টা শুরু হয়। পরে সকাল ১০টার পর থেকে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যায়।

নাওজোড় হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি ছুটি শুরু না হলেও বৃহস্পতিবার রাত থেকে ঘরমুখী মানুষ গ্রামে যাওয়া শুরু করেছে। তখন থেকেই মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে; বিশেষ করে চন্দ্রা-নবীনগর সড়কে। সকালে কিছু সময় যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল, তবে এখন যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) উপকমিশনার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, ঈদযাত্রায় মহাসড়কে যানবাহন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। এখন পর্যন্ত এই পথে গাজীপুর অংশে কোথাও যানজটের খবর পাওয়া যায়নি।