জাপায় ফিরলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জিয়াউল হক, লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী

জিয়াউল হক মৃধাছবি: সংগৃহীত

জাতীয় পার্টির (জাপা–কাদের) টানা দুবারের সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা দীর্ঘদিন পর নিজ দলে ফিরেছেন। তাঁর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে দলটির বর্তমান মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী ব্রাহ্মণবাড়িয়া–২ (সরাইল, আশুগঞ্জ ও বিজয়নগরের একাংশ) আসনের প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করেছেন।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে ঢাকার একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে ২৪৩ জন দলীয় প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করেছে জাপা।

দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জিয়াউল হক মৃধা নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী হয়ে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন।

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এ আসনে তাদের দলীয় প্রার্থী না দিয়ে মহাজোটের প্রধান শরিক জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়। ওই নির্বাচনে জিয়াউল হক মৃধা দলীয় মনোনয়ন পাননি। এর পরিবর্তে এই আসনে মনোনয়ন পান ব্রাহ্মণবাড়িয়া–৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনের বাসিন্দা রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া। তিনি লাঙ্গল প্রতীক পান। সদর উপজেলার কোড্ডা গ্রামের রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া জিয়াউল হক মৃধার জামাতা। তবে সুবিধা করতে না পেরে নির্বাচনের দুই দিন আগে সরে দাঁড়ান তিনি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া বিএনপির প্রার্থী হয়ে ৮৩ হাজার ৯৯৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মঈন উদ্দিন। তিনি ৭৫ হাজার ৪১৯ ভোট পেয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে জিয়াউল হক মৃধা সিংহ প্রতীকে ৪০ হাজার ভোট পেয়ে তৃতীয় হন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ও চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। জিয়াউল হক মৃধা রওশনপন্থী হিসেবে পরিচিত। তিনি জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দল থেকে বহিষ্কৃত হন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সাড়ে তিন বছর পর আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার দলত্যাগ ও মৃত্যুর কারণে ২০২৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ও ৫ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া–২ আসনে দুটি উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উভয় নির্বাচনে জিয়াউল হক দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। পরে ১ ফেব্রুয়ারির উপনির্বাচন থেকে তিনি সরে দাঁড়ান এবং ৫ নভেম্বরের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনটি মহাজোটের শরিক জাপাকে আওয়ামী লীগ ছেড়ে দেয়। তখনো জিয়াউল হক মৃধা স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। ওই নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মঈন উদ্দিন (কলার ছড়ি) স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ৮৪ হাজার ৬৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জিয়াউল হক মৃধা (ঈগল)। তিনি ৫৫ হাজার ৪৩১ ভোট পেয়েছিলেন।

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে জিয়াউল হক মৃধার পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন তাঁর অনুসারীরা। গত বছরের ৫ আগস্টের পর তিনি একাধিক মামলার আসামি হয়ে এলাকা ত্যাগ করেন। গত মঙ্গলবার জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের ঘোষিত ১২২টি আসনের প্রার্থী তালিকায় তাঁর নাম রয়েছে।

তবে গতকাল বিকেলে ঢাকায় জাপার (কাদের) ঘোষিত ২৪৩ জন দলীয় প্রার্থীর তালিকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া–২ আসনে জিয়াউল হক মৃধার নাম রয়েছে। এ তালিকায় রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়ার নামও রয়েছে, তবে তিনি এবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া–৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসন থেকে নির্বাচনে লড়বেন।

জিয়াউল হক মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, ‘দল আমাকে ডেকে নিয়ে জামাইয়ের সঙ্গে দ্বন্দ্ব মিটিয়ে দিয়েছেন। দলের চেয়ারম্যানের সঙ্গেও আমার আর কোনো দ্বন্দ্ব–বিরোধ নেই। এখন নির্বাচন করার সুষ্ঠু পরিবেশ হলে দলীয় প্রতীক লাঙ্গল নিয়েই নির্বাচন করতে চাই। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে। এগুলো প্রত্যাহারে আমাদেরকে নির্বাচন করার পরিবেশ করে নিতে হবে। আমরা চাই, দেশে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচন হোক।’