ঢাকায় নারী পুলিশ সার্জেন্টের সঙ্গে ধস্তাধস্তি, ৮ দিন পর কারামুক্ত মা-মেয়ে

গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের হয়ে আসছেন দিলারা আক্তার (৫০) ও তাঁর মেয়ে তাসফিয়া ইসলাম (২২) । বুধবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে নারী পুলিশ সার্জেন্টের সঙ্গে ধস্তাধস্তি ও মারধরের অভিযোগে করা মামলায় দিলারা আক্তার (৫০) ও তাঁর মেয়ে তাসফিয়া ইসলাম (২২) কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। বুধবার বেলা পৌনে একটায় তাঁরা গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের হয়ে আসেন। কারাগারে তাঁদের নিতে আসেন তাসফিয়ার বাবা মফিজুল ইসলাম ও বড় বোন তানজিনা ইসলাম।

মুক্তি পাওয়ার পর দিলারা আক্তার বলেন, ‘পুলিশের সার্জেন্ট ক্ষমতা দেখাতে গিয়ে আমাদের সঙ্গে অন্যায় করেছেন। তাঁরা চাইলে আমাদের বিষয়টি সেখানে বসে সমাধান করে দিতে পারতেন। আমার মেয়ের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হওয়ার জন্য আমরা তাঁদের কাছে ক্ষমাও চেয়েছিলাম। কিন্তু তাঁরা যা খুশি তা–ই করতে পারেন, এটা বোঝাতে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়েছেন। শুনেছি আমাদের বিরুদ্ধে নাকি চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে, যা খুবই দুঃখজনক।’

মায়ের কথা শেষ হলে হাতের কালো দাগ দেখিয়ে তাসফিয়া ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ সার্জেন্ট প্রথমে বলেন আমাদের গাড়ির ভিডিও আছে। যার কারণে আমি তাঁর কাছে ভিডিও দেখতে চেয়েছি। তিনি ভিডিও দেখাতে না পেরে আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে যান। পরে বলেন, “তুই এখান থেকে চলে যা। নইলে তোরে কিন্তু মারব।” তখন আমি তাঁকে বলি, আসেন মারেন, আমি তো দাঁড়িয়েই আছি। এরপরই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমার গালে একটি জোড়ে চড় মারেন। পরে চুল টেনে ইচ্ছেমতো মারধর করেন। এরপর বলেন, “ওর লাইফটা শেষ করে দে। প্রয়োজনে আমি চাকরি ছেড়ে দেব। তারপরও ওর লাইফ শেষ করে দেব।” আমি বিনা কারণে জেল খাটলাম। সঠিক বিচার পেলাম না।’

আরও পড়ুন

দিলারা আক্তার আরও বলেন, কারাগারে প্রবেশের পর নানাভাবে তাঁদের হেনস্তা করা হয়। তাঁকে ও তাঁর মেয়েকে আলাদা আলাদা রাখা হয়।

গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান দিলারা আক্তার ও তাসফিয়া ইসলামের জামিন মঞ্জুর করেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ ও তথ্য বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) এশারত আলী জানিয়েছেন, মা-মেয়ের পক্ষে জামিন চেয়ে আবেদন করা হলে রাষ্ট্রপক্ষ বিরোধিতা করে। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় দুজনের জামিন মঞ্জুর করেন।

আরও পড়ুন

কাশিমপুর মহিলা কারাগারের ডেপুটি জেলার মো. ফেরদৌস মিয়া জানান, জামিনের কাগজ পেয়ে তা যাচাই-বাছাই শেষে তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

স্ত্রী-সন্তান নিতে এসে ব্যাংক কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে কী অন্যায় করা হয়েছে, সেটি সবাই জেনেছে। বিনা দোষে আমার স্ত্রী ও ছোট মেয়েকে জেল খাটতে হয়েছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিচার চেয়েছি। ওই সার্জেন্ট যে অন্যায় করেছে তার বিচার চাই।’ তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিবকে চিঠি দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।

আরও পড়ুন

ট্রাফিক পুলিশ সূত্র জানায়, গত ২৬ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুরের শিয়া মসজিদ এলাকায় একটি প্রাইভেট কার অবৈধভাবে পার্কিংয়ের জন্য পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেছিলেন ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট হাসিনা খাতুন। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে ওই সার্জেন্টের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান দিলারা আক্তার ও তাঁর মেয়ে তাসফিয়া। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় মা ও মেয়ের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মামলা করেন সার্জেন্ট হাসিনা খাতুন। ওই মামলায় ২৭ সেপ্টেম্বর তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

ট্রাফিক সার্জেন্ট হাসিনা খাতুন ঘটনার পর সাংবাদিকদের বলেন, অবৈধ গাড়ি পার্কিংয়ের অভিযোগে পাঁচ হাজার টাকার মামলা দেওয়ার পর দিলারা আক্তার উত্তেজিত হয়ে ছুটে আসেন। এ সময় তাঁকে বুঝিয়ে শান্ত করা হয়। কিন্তু এরই মধ্যে তাসফিয়া এসে বলেন, ‘আমার গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দিলি কেন?’ এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে তাসফিয়া তাঁর মুখমণ্ডলে আঘাত করেন। তখন তাসফিয়ার মাও তাঁকে আক্রমণ করেন।

এ ঘটনায় পুলিশের আচরণে হতাশা প্রকাশ করে মফিজুল বলেন, ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা যেভাবে তাঁর মেয়ে ও স্ত্রীকে মারধর করেছেন, তাতে তাঁদেরই মামলা করার কথা। তারপরও বিষয়টি মীমাংসা করতে তিনি থানায় বসে পুলিশের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। প্রয়োজনে মেয়ে ও স্ত্রীর কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু পুলিশ তাঁর কথা কানে নেয়নি।