নড়াইলে প্রতীক বরাদ্দের সময় ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলা

নড়াইল জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের সময়ে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলা। সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে
ছবি: প্রথম আলো

নড়াইল জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের সময় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী সৈয়দ ফয়জুল আমিরের সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় দুই সাধারণ সদস্য প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবাস চন্দ্র বোস। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ ফয়জুল আমির এবং জেলা পরিষদের প্রশাসক শেখ মো. সুলতান মাহমুদ।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে প্রতীক বরাদ্দের সময় সামনের দিকে বসেছিলেন প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের নেতারা। ২ নম্বর ওয়ার্ডের (নড়াইল সদর) সাধারণ সদস্য প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের সময় প্রার্থী খোকন কুমার সাহা ও মো. ওবায়দুর রহমান দুজনেই তালা প্রতীক চান। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। এতে তাঁদের সমর্থকেরাও জড়িয়ে পড়েন। এ সময় সম্মেলনকক্ষের পেছনের দিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকেরা ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী সৈয়দ ফয়জুল আমিরের সমর্থকদের ওপর হামলা করেন। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার সময় ফয়জুল আমির সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।

ঘটনার সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ফকরুল হাসান, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী সুবাস চন্দ্র বোস, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বিশ্বাস, নড়াইল পৌরসভার মেয়র আঞ্জুমান আরা, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার আলমগীর হোসেনসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সৈয়দ ফয়জুল আমির বলেন, ‘মনোনয়নপত্রে আমার সমর্থনকারী লোহাগড়ার নোয়াগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সৈয়দ নবাব আলী ও প্রস্তাবকারী লোহাগড়ার কাশিপুর ইউপি সদস্য মো. শরিফুল ইসলামের ওপর সুবাস চন্দ্র বোসের সমর্থকেরা অতর্কিত হামলা করেন। হামলায় আমার অন্তত ১৫ জন সমর্থক আহত হয়েছেন।’

ইউপি সদস্য সৈয়দ নবাব আলী প্রথম আলোকে বলেন, সম্মেলনকক্ষের মধ্যে সুবাস চন্দ্র বোসের কিছু সমর্থক তাঁকে ও শরিফুলকে ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য টানাহেঁচড়া করেন। এ সময় তাঁদের (ফয়জুল আমির) পক্ষের লোকজন এগিয়ে এলে কিলঘুষি মারেন এবং চেয়ার দিয়ে বেধড়ক পেটান। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আবার হামলার আশঙ্কায় তাঁরা সম্মেলনকক্ষের মধ্যে ছিলেন। প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা চাইলে পুলিশ তাঁদের বাড়ির দিকে এগিয়ে দেয়।

নড়াইলে জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের সময় দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি। সোমবার সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে
ছবি: প্রথম আলো

সৈয়দ ফয়জুল আমির বলেন, প্রতীক বরাদ্দের সময় জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে প্রশাসনের উপস্থিতিতে এমন ঘটনা ঘটল। এর সুষ্ঠু বিচার চান তিনি। তাঁকে নির্বাচন থেকে সরাতে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হলে আমি জিতব। প্রশাসনের কাছে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করার অনুরোধ জানাচ্ছি।’

অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সুবাস চন্দ্র বোস প্রথম আলোকে বলেন, তিনি সামনের দিকে ছিলেন। পেছনে কারা কী করেছেন, তা তিনি জানেন না। তবে তর্কবিতর্ক ও ঠেলাঠেলি হয়েছে। ছোট ঘটনা বড় করে দেখানো হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ভয়ভীতি দেখানোর বিষয়ে সুবাস চন্দ্র বোস বলেন, ‘আমার সঙ্গে তো তার কথা হয় না। তাকে কে হুমকি দেবে? সে সামনে এসে বলুক। তার অতীত কার্যক্রমের কারণে জনপ্রিয়তায় ধসে নেমেছে, তাই এসব অপবাদ দিচ্ছে।’

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ফকরুল হাসান বলেন, ওই সাধারণ দুই সদস্য প্রার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আর সম্মেলনকক্ষের পেছনের দিকে যে গোলযোগ হয়েছে, তা কারা করেছে পরিষ্কার নয়। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সৈয়দ ফয়জুল আমিরের প্রস্তাবকারী, সমর্থনকারীসহ তাঁদের সঙ্গীদের পুলিশ দিয়ে এগিয়ে দেওয়া হয়েছে।