জালিমেরা আর বেশি দিন বাংলার মানুষের সঙ্গে জুলুম করতে পারবে না: চরমোনাই পীর

বরিশালে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির চরমোনাইয়ের পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। শুক্রবার বিকেলে নগরের সদর রোডে
ছবি: প্রথম আলো

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির চরমোনাইয়ের পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছেন, দেশের মানুষ যেভাবে দলমত-নির্বিশেষে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রাজপথে প্রতিবাদে নেমেছে, তাতে জালিমেরা আর বেশি দিন বাংলার মানুষের সঙ্গে জুলুম করতে পারবে না।

শুক্রবার সারা দেশে বিক্ষোভ-সমাবেশের ডাক দেয় ইসলামী আন্দোলন। এর অংশ হিসেবে বরিশালে করা সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে যাঁরা নির্বাচন কমিশনে রয়েছেন, তাঁদের মনে হয় তামাশার পাত্র। আমি ধিক্কার জানাই এই সিইসিকে, সিইসি হওয়ার কোনো যোগ্যতাই ওনার নেই।’

১২ জুন বরিশাল সিটি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ চলার সময় ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী ও দলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ও ব্যর্থ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) পদত্যাগের দাবিতে এ বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়। এর আয়োজন করে ইসলামী আন্দোলন বরিশাল মহানগর ও জেলা কমিটি।

শুক্রবার জুমার নামাজ শেষেই বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল নিয়ে দলটির নেতা-কর্মী ও বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী নগরের সদর রোডে অশ্বিনীকুমার হলের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। বেলা আড়াইটার পর পুরো এলাকা ভরে গেলে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সমাবেশ উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্যকে সতর্ক অবস্থায় দেখা যায়। বেলা তিনটায় অশ্বিনীকুমার হলের সামনে ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চে শুরু হয় সমাবেশ।

সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম আরও বলেন, ‘ইসলামী আন্দোলন নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত একটি বৈধ দল। আপনারা দেখেছেন, আমরা ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য, ইবাদতের অংশ হিসেবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে অংশ নিই। এর ধারাবাহিকতায় এবারের সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। বরিশাল আমাদের জন্মভূমি, তাই এখানে আমার ছোট ভাই মুফতি ফয়জুল করিমকে প্রার্থী করেছিলাম। আমরা নির্বাচনে এসেছিলাম অর্থসম্পদ কামাইয়ের জন্য নয়, দেশের  মানুষ যাতে স্বাধীনভাবে তাঁদের ন্যায্য অধিকার ভোগ করতে পারেন সে জন্য। কিন্তু বরিশালে সরকার, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন যা দেখিয়েছে, সারা দুনিয়ায় তা কলঙ্কিত ইতিহাস হয়ে থাকবে।’

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রধান আরও বলেন, ‘মুফতি ফয়জুল করিম কেবল আমার ছোট ভাই নয়। ফয়জুল করিম নায়েবে রসুল। তার ওপর হামলা করে দুনিয়ার আলেমদের ওপর হামলা করা হয়েছে। বরিশাল শহর আমাদের বাড়ি। আমরা এখানে বানের জলে ভেসে আসিনি।’

ইসলামী আন্দোলনের বরিশাল মহানগর শাখার সহসভাপতি নাছির আহমেদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নুরুল হুদা ফয়েজী, সাংগঠনিক সম্পাদক হেদায়েতুল্লা আজাদী, জাগুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজবাউল্লাহ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ নুরুল করিম, চরমোনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ জিয়াউল করিম প্রমুখ।

দেশ ও স্বাধীনতা আজ হুমকির মুখে মন্তব্য করে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘দেশ আজ পরের দেশের তাঁবেদারিতে চলে গেছে। সেখানে থেকে যেভাবে যে সিদ্ধান্ত হয়, সেভাবেই আমাদের বাংলাদেশকে পরিচালিত হতে হয়। এ দেশের স্বাধীনতার জন্য লাখ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছেন। প্রয়োজনে দেশকে রক্ষায়, ইসলাম রক্ষায়, ইমানের রক্ষায় আমরা আরেকটি স্বাধীনতাযুদ্ধ করব।’

সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে দলটি। মিছিলটি নগরের কাকলি মোড় হয়ে ফজলুল হক অ্যাভিনিউ, চকবাজার ও গির্জা মহল্লা হয়ে অশ্বিনীকুমার হলের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

গত ১২ জুন বরিশাল সিটি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ চলার সময় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের ছাবেরা খাতুন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে যান ইসলামী আন্দোলনের (হাতপাখা) প্রার্থী মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম। সেখান থেকে বের হওয়ার পর হাতেম আলী কলেজ চৌমাথার কাছে ৩০ থেকে ৪০ জন লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে তাঁর ওপর হামলা চালান। এতে তিনিসহ দলের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হন।

নির্বাচনে বেসরকারি ফলাফলে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ৮৭ হাজার ৮০৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ইসলামী আন্দোলনের (হাতপাখা প্রতীক) প্রার্থী মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম পান ৩৩ হাজার ৮২৮ ভোট।