লঞ্চের কেবিনে নির্ধারিত ভাড়ার বেশি আদায়, ডেকে কম

প্রতি কিলোমিটারে জনপ্রতি ভাড়া বাড়িয়ে তিন টাকা করা হয়েছে। প্রতিটি লঞ্চে ভাড়ার তালিকা টাঙানোর নির্দেশ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।

জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় লঞ্চের ভাড়া ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে সরকার। লঞ্চের ডেকে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম আদায় করা হলেও কিছু কিছু লঞ্চে কেবিনের নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত সদরঘাটে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা গেছে।

সদরঘাট টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করায় বিভিন্ন নৌপথের লঞ্চমালিকেরাও ভাড়া বাড়িয়েছেন। দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি নৌপথে সরকার নির্ধারিত ডেকের ভাড়া কম নেওয়া হলেও ভোলা, বরিশাল, চাঁদপুর ‍রুটে কেবিনের ক্ষেত্রে বেশি ভাড়া আদায় করছে। সরকার নির্ধারিত নতুন ভাড়ার তালিকা প্রতিটি লঞ্চে টাঙানোর নির্দেশ দিলেও বেশ কয়েকটি লঞ্চে এখনো ভাড়ার তালিকা টাঙানো হয়নি। এতে লঞ্চের প্রকৃত ভাড়া নিয়ে যাত্রী ও লঞ্চ কর্মচারীদের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হচ্ছে।

বরিশালগামী প্রিন্স আওলাদ লঞ্চের যাত্রী ইমতিয়াজ হাওলাদার বলেন, ডেকের ভাড়া ৪৫০ টাকা চেয়েছে। এখন লঞ্চ ছাড়ার পর বোঝা যাবে কত টাকা ভাড়া নেবে।

এই লঞ্চের কর্মচারী সিরাজুল ইসলাম জানান, পূর্বে ডেকের ভাড়া ছিল ৩৫০ টাকা। সরকার ৩০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করে ৪৫৯ টাকা নির্ধারণ করেছে। অথচ আমরা এর চেয়ে কম ভাড়া নিচ্ছি।

বরিশালগামী সুরভী-৭ লঞ্চের যাত্রী ইমরান হোসেন বলেন, ‘ডাবল কেবিনের ভাড়া ২ হাজার ২০০ টাকা চেয়েছে। অনেক অনুরোধ করে দুই হাজার টাকায় রাজি করিয়েছি। আমার মনে হয় কেবিনের ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও কিছুটা বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।’

লঞ্চের কেরানি মতিউর মিয়া বলেন, ‘আমরা কেবিনের ভাড়া বেশি নিচ্ছি না। ডাবল কেবিনের ভাড়া ২ হাজার ২০০ টাকা ও সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া ১ হাজার ৪০০ টাকা আগে থেকেই নির্ধারণ ছিল। বরং আমরা কমিয়ে ডাবল কেবিনের ভাড়া ২ হাজার টাকা নিয়েছি।’

পাতারহাটগামী এমভি ইয়াদ লঞ্চের যাত্রী শরীফ হোসেন বলেন, ‘ডেকের নির্ধারিত ভাড়া ৪৭২ টাকা। তবে আমাদের কাছ থেকে ৪৫০ টাকা ভাড়া নিয়েছে।’

একই লঞ্চের যাত্রী সোলায়মান মিয়া বলেন, ‘সিঙ্গেল কেবিন ভাড়া নিয়েছি ১ হাজার ৮০০ টাকায়। কিন্তু গত ২৭ ‍জুলাই একই লঞ্চে এসেছিলাম, ভাড়া নিয়েছিল ১ হাজার ৫০০ টাকা।’ তিনি আরও বলেন, সরকার লঞ্চে ভাড়া ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি করলেও কেবিনের ক্ষেত্রে এর চেয়েও কিছুটা বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এসব বিষয় সরকারের খতিয়ে দেখা উচিত।

ইয়াদ লঞ্চের কর্মচারী সুরুজ মিয়া বলেন, ‘সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া হচ্ছে দুই হাজার টাকা। কিন্তু আমরা ২০০ টাকা কমিয়ে ১ হাজার ৮০০ টাকা নিচ্ছি। যাত্রীরা অনেক সময় না বুঝে ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ করেন।’

হাতিয়াগামী ফারহান-৪ লঞ্চের ডেকের যাত্রী সোহরাব হোসেন বলেন, লঞ্চের কর্মচারীরা ডেকের ভাড়া চেয়েছেন ৫৭০ টাকা। পরে তাঁদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা করলে ৫৫০ টাকা নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, লঞ্চের নতুন ভাড়া সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। প্রতিটি লঞ্চে নতুন ভাড়ার তালিকা থাকলে যাত্রীদের বুঝতে সুবিধা হয়। প্রতিটি লঞ্চে নতুন ভাড়ার তালিকা টাঙানো উচিত। এটা না থাকার কারণে লঞ্চের কর্মচারীরা ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করার চেষ্টা করেন।

চাঁদপুরগামী ঈগল-৭ লঞ্চের যাত্রী মোস্তফা মিয়া বলেন, ‘চেয়ারের ভাড়া ২৫০ টাকা নিয়েছে। পূর্বে আমাদের কাছ থেকে ১৫০ টাকা নিত।’