রাস্তাঘাট ভাঙাচোরা। মিলছে না সুপেয় পানি। সড়কবাতিও জ্বলে না। এসব নাগরিক সুবিধা না পেলেও তাঁদের নিয়মিত পানি ও সড়ক বাতির জন্য বিল দিতে হচ্ছে। আছে আরও নানা সমস্যা। এসব সমস্যার কারণে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা।
সাত বছর আগে চর জাগুয়া এলাকার বাসিন্দাদের বরিশাল শহরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম সেতুটি ভেঙে পড়ে। সেটি মেরামত না হওয়ায় যোগাযোগবিচ্ছিন্ন এই এলাকার অন্তত দেড় শ পরিবার।
হরিনাফুলিয়া, টিয়াখালী, চর জাগুয়া—এই তিন এলাকা নিয়ে ২৬ নম্বর ওয়ার্ড। হরিয়াফুলিয়ার ঠাকুরবাড়ির পুল থেকে নতুনহাট ঘুরে দেখা যায়, নূন্যতম সুযোগ-সুবিধা নেই এখানে। এসব এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, পানি সরবরাহ লাইন ও সড়কবাতি না থাকলেও কর পরিশোধ করতে হচ্ছে। আর সড়কগুলোর সবই বেহাল।
দক্ষিণ চর জাগুয়া এলাকাটি গত দুই দশকেও কোনো উন্নয়ন হয়নি। এই এলাকার মানুষের বরিশাল শহরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের একমাত্র সেতুটিও ভেঙে পড়ে আছে সাত বছর ধরে।
চর জাগুয়া এলাকার বাসিন্দারা জানান, সড়ক বাতি না থাকায় রাতের বেলা টর্চের আলো জ্বালিয়ে চলাফেরা করতে হয় বাসিন্দাদের।
ওই এলাকার বৃদ্ধ মো. জব্বার হাওলাদার বলেন, মূল শহর থেকে বিচ্ছিন্ন সুগন্ধা নদীর তীরে অনেকগুলো পরিবার বসবাস করলেও তাদের চারদিকে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নের তিমিরকাঠি গ্রাম, শুধু মাঝখানের চর জাগুয়া অংশের বাসিন্দারা সিটির বাসিন্দা।
এলাকাবাসী জানান, তাঁদের আয়রোজগার কম। এতে জীবন চালানোই কষ্টসাধ্য। এখানে সিটি করপোরেশনের কোনো সড়কবাতি নেই। তারপরেও করের সঙ্গে বিদ্যুৎ বিল গুনতে হচ্ছে। এই এলাকার বাসিন্দা বকুল বেগম বলেন, প্রায় ৩ কিলোমিটারের চরজাগুয়া সড়কটি ১২ থেকে ১৩ বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিল। এরপর কোনো কাজ হয়নি এই সড়কে। ফলে এখন আর চলাচলের উপযোগী নেই। আর সেতু তো পড়ে আছে বহুদিন, মেরামত হয়নি।
সরেজমিন দেখা যায়, নলছিটির কুমারখালী বাজার থেকে সুগন্ধা নদীর তীর পর্যন্ত গোটা সড়কের পিচঢালাই উঠে গিয়ে খোয়ার স্তর বের হয়ে গেছে। আবার বিভিন্ন জায়গায় মাটি দেবে গর্তও হয়ে গেছে।
চর জাগুয়ার বাসিন্দা কৃষক মিলন হাওলাদার বলেন, ‘বরিশাল শহরের সঙ্গে আমাদের সড়ক যোগাযোগের কোনো ব্যবস্থাই নেই। অনেক বছর আগে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল এখানে। সেতুটি পার হয়ে হরিপাশা বাজারসংলগ্ন খেয়া পার হয়ে কালিজিরা পৌঁছাতে হতো। কিন্তু প্রায় সাত বছর আগে বালুর বাল্কহেডের ধাক্কায় সেতুটি ভেঙে নদীতে পড়ে গেছে। পরে আর সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।’
স্থানীয় কাউন্সিলর মো. হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসলে আমি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করতে পারিনি। উল্লেখ করার মতো কিছু হয়নি। বিদ্যুৎ, পানির লাইন না থাকলেও এলাকাবাসীকে বিল গুনতে হচ্ছে—এটা সত্য। আসলে সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন নির্ভর করে বরাদ্দের ওপর। আমরা বরাদ্দ পাইনি। এখন জনগণের কাছে জবাবদিহি তো করতেই হবে।’
সেতু মেরামতের বিষয়ে তিনি মো. হুমায়ুন কবির বলেন, তিন দফা বাল্কহেডের ধাক্কায় সেতুটি ভেঙে গেছে। এরপর বাল্কহেডের মালিকের কাছ থেকে কিছু জরিমানা আদায় করা হলেও তা দিয়ে সেতুটি মেরামত করা সম্ভব হয়নি।