বড়রা খুঁজছেন সংসারের জিনিসপত্র, ছোটরা বইখাতা

বিধ্বস্ত ভিটায় পুড়ে যাওয়া বইয়ের কিছু অংশ খুঁজে পেয়েছে শিশু ইসরাফিল হোসেন। বৃহস্পতিবার সকালে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বাঁশিলা উত্তরপাড়ায়
ছবি: মুক্তার হোসেন

তিন মাস আগে বিদ্যালয় থেকে নতুন বই পেয়েছিল প্রথম শ্রেণির ছাত্র ইসরাফিল হোসেন (৫)। সেই বই নিয়ে ভালোভাবেই পড়াশোনা চলছিল তার। ইসরাফিলদের বাড়িসহ ২৪টি বাড়ি আগুনে পুড়ে গেছে। এর পর থেকে আর তার বইপত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার মতো আরও আট শিক্ষার্থী অগ্নিকাণ্ডের চার দিন পরও বইপত্র খুঁজছে। আর বড়রা খুঁজছেন সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।

গত রোববার বিকেলে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বাঁশিলা উত্তরপাড়ায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে। ইসরাফিল হোসেনের বাবা ইয়াদুল হোসেন বাঁশিলা উত্তরপাড়ার বাসিন্দা। হালতি বিল ঘেঁষে গড়ে ওঠা এ পাড়ার ২৪টি বসতি ছিল মূলত একই ভিটাতে। ইয়াদুল হোসেন বলেন, তাঁদের একটি বাড়ি অন্যটির সঙ্গে লাগোয়া। বাড়ির বসতিরাও একে অপরের কাছের আত্মীয়। গত রোববার বিকেলে যখন আগুন লাগে, তখন বিলের হাওয়ায় সারা পাড়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ভিটার ২৪টি বাড়ির সবকিছুই পুড়ে ভস্মীভূত হয়েছে।

অনেকে তাঁদের খাদ্যসহায়তা দিচ্ছে, ঘরের জন্য ঢেউটিন দিচ্ছে, পরনের পোশাক দিচ্ছে; কিন্তু ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার বইখাতা দিচ্ছে না, যা তাদের খুবই দরকার।
বেলা বেগম, বাসিন্দা, বাঁশিলা উত্তরপাড়া, নলডাঙ্গা

আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাতটায় বিলপাড়ের উত্তরপাড়ায় গিয়ে দেখা যায় বিধ্বস্ত বসতভিটা। ঘরগুলোর খুঁটি শুধু দাঁড়িয়ে আছে। বাকি সব পুড়ে গেছে। পোড়া বিধ্বস্ত ভিটায় বড়রা সংসারের এটা-ওটা খুঁজছেন। আর শিশু-কিশোরেরা খুঁজছে তাদের পড়ালেখার বইখাতা। পাড়ার দক্ষিণের একটি ভিটায় জীর্ণশীর্ণ শিশু ইসরাফিল পুড়ে যাওয়া বইয়ের কিছু অংশ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এ সময় কথা হয় তার সঙ্গে। ইসরাফিল জানায়, সে বাঁশিলা দারুল উলম দাখিল মাদ্রাসার প্রথম শ্রেণির ছাত্র। কিছুদিন পরই তার অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা। কিন্তু বই পুড়ে যাওয়ায় সে পড়ালেখা করতে পারছে না।

আফরোজা খাতুন দাখিল পরীক্ষার্থী। আর দুই দিন পরই তার পরীক্ষা। তার চোখেমুখে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। সে জানায়, গত মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার জন্য কিছু বই পাঠানো হয়েছে। কিন্তু খোলা আকাশের নিচে বসে তো পড়ালেখা করা যায় না। সে প্রতিবেশীদের বাড়িতে গিয়ে পড়ার চেষ্টা করছে।

বিধ্বস্ত বাড়ির ভিটায় পুড়ে যাওয়া বই হাতে দাঁড়িয়ে কিশোরী আফরোজা খাতুন। বৃহস্পতিবার সকালে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বাঁশিলা উত্তরপাড়ায়
ছবি: প্রথম আলো

পাড়ার যমজ বোন হাসি ও খুশি। ওরা সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। বই হারিয়ে তাদের পড়ালেখা বন্ধ। পঞ্চম শ্রেণির আফসানা খাতুন, মিনু খাতুন, সপ্তম শ্রেণির আবু সাঈদ, পঞ্চম শ্রেণির মৌ খাতুন ও সপ্তম শ্রেণির সিয়াম হোসেনের একই অবস্থা। তারা নতুন বইয়ের দাবি জানিয়েছে।

শিশুশিক্ষার্থী সিয়াম হোসেনের নানি বেলা বেগম বলেন, অনেকে তাঁদের খাদ্যসহায়তা দিচ্ছে, ঘরের জন্য ঢেউটিন দিচ্ছে, পরনের পোশাক দিচ্ছে; কিন্তু ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার বইখাতা দিচ্ছে না, যা তাদের খুবই দরকার।