ইটভাটার ধোঁয়ায় পুড়ছে আখখেত, চাষির ক্ষতি

ক্ষতিগ্রস্ত ৭ কৃষক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

ইটভাটার কালো ধোঁয়া ও কয়লার আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আখখেত। গত রোববার যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার জামদিয়া এলাকায়।
ছবি: প্রথম আলো

যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার জামদিয়া ইউনিয়নের একটি ইটভাটার পাশের আখখেত পুড়ে যাচ্ছে। ৩৫ বিঘার বেশি জমির আখখেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় ১৯ জুলাই ক্ষতিগ্রস্ত ৭ কৃষক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া ও কয়লার আগুনে আখখেতের এমন ক্ষতি হচ্ছে।

উপজেলার সোনাখোলার মাঠের বেশির ভাগ জমিতে আখের চাষ হয়। এ ছাড়া মাঠে বোরো ও আমন ধানের চাষ হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে উপজেলার জামদিয়া গ্রামে যশোর-নড়াইল আঞ্চলিক সড়কের পাশে কৃষিজমিতে মেসার্স সিটি ব্রিকস-১ গড়ে ওঠে। প্রতিবছর অগ্রহায়ণ মাসে ইটভাটায় ইট পোড়ানো শুরু হয় এবং তা আষাঢ় মাস পর্যন্ত চলে। ইটভাটার চিমনি কিছুটা ছোট। ইট পোড়ানোর সময় কালো ধোঁয়া এলাকায় ছেয়ে যায়। ধোঁয়ার সঙ্গে অসংখ্য কয়লার টুকরা বের হয়। ওই কয়লার টুকরায় আগুন থাকে। কয়লার টুকরাগুলো সরাসরি আখ ও ধানের গাছে গিয়ে পড়ে পাতা পুড়ে যায়। ১০ বছর ধরে ফসলের এমন ক্ষতি হচ্ছে।

১৫ জনের বেশি কৃষককে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের ফসলের যাতে ক্ষতি না হয়, সে জন্য আমরা কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছি।
রিপন হোসেন, ইটভাটার মালিকের ছেলে

গত চৈত্র মাসে এক দিন ও আষাঢ় মাসে এক দিন কালো ধোঁয়া ও কয়লার আগুনে আশপাশের আখখেতের পাতা পুড়ে যায়। এতে ৩০-৩৫ বিঘা (৪৮ শতকে বিঘা) জমির আখখেত নষ্ট হয়ে যায়। ইটভাটার কারণে প্রতিবছর আখের ক্ষতি হয়। এবার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। আখ সাধারণত পাঁচ-ছয় হাত লম্বা হয়। এবার হয়েছে সাড়ে তিন থেকে চার হাত। ক্ষতিপূরণ হিসেবে ভাটার মালিক এবার ১০-১২ জন আখচাষিকে ৫ থেকে ৯ হাজার টাকা করে দিয়েছেন।

জামদিয়া গ্রামের কৃষক সুকান্ত গাঙ্গুলী বলেন, ‘আমার ছয় কাঠা জমিতে আখ রয়েছে। বছরে কাঠাপ্রতি ১ হাজার ৫০০ টাকা করে লিজ নিয়ে ওই জমিতে আমি আখ চাষ করি। ইটভাটার কালো ধোঁয়া আর কয়লার আগুনে আমার পুরো জমির আখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাতা পুড়ে আখ লম্বা হয়নি। গত বছর ওই জমি থেকে আমি ৯০ হাজার টাকার আখ বিক্রি করেছিলাম। এবার ৬৫ হাজার টাকার আখ বিক্রি করেছি। ইটভাটার মালিকের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি মামলার ভয় দেখান। আমরা ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’

ইটভাটার মালিক আবদুল মালেক বিশ্বাসের সঙ্গে অনেক চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি। তবে তাঁর ছেলে রিপন হোসেন বলেন, তাঁর বাবা মালিক হলেও তিনি ইটভাটা দেখাশোনা করেন। ভাটার কারণেই কিছু আখখেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৫ জনের বেশি কৃষককে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘কৃষকদের ফসলের যাতে ক্ষতি না হয়, সে জন্য আমরা কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছি। এ বছর ৬০ ফুট উচ্চতার চিমনি বাড়িয়ে ১২০ ফুট করা হবে। এ ছাড়া ভাটায় ডিজিটাল লোড দেওয়া হবে। আগামী বছর থেকে ফসলের আর কোনো ক্ষতি হবে না।’

দাঁতপুর গ্রামের কৃষক টুকু মিয়া বলেন, ‘ইটভাটার ধোঁয়া ও আগুনে আমার সব খেতের আখ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত বছর আমি ৬০ হাজার টাকার আখ বিক্রি করেছিলাম। এবার ৩১ হাজার টাকার আখ বিক্রি করেছি। ভাটার মালিক ৯ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, ইটভাটা আশপাশের ফসলের ক্ষতি করে। জামদিয়ার ইটভাটার ধোঁয়া ও আগুনে আখের ক্ষতির ব্যাপারে কোনো কৃষক অভিযোগ করেননি। দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের খেত পরিদর্শন করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সাঈদ আনোয়ার বলেন, নতুন ইটভাটার পরিবেশগত ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে না। পুরোনো ইটভাটার পরিবেশগত ছাড়পত্র নবায়ন বন্ধ রয়েছে। মেসার্স সিটি ব্রিকস-১ ইটভাটার ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হবে।