নির্বাচিতদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর পর্যন্ত সরকারকে সাহায্য করবে জামায়াত: মিয়া গোলাম পরওয়ার
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারকে সাহায্য করবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তবে এতে লম্বা সময় দিতে চান না তাঁরা। দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে নড়াইল জেলা শাখা আয়োজিত রুকন সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মিয়া গোলাম পরওয়ার। জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
মিয়া গোলাম পরওয়ার তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা কথা দিয়েছি, জামায়াতে ইসলামী একটি অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর পর্যন্ত সরকারকে সাহায্য করতে রাজি। কিন্তু সেই সময়টা খুব লম্বা নয়। কারণ, সময় লম্বা হলে ষড়যন্ত্র বাড়ে, চক্রান্ত বাড়ে। এখনো প্রশাসনের অধিকাংশ জায়গায় ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসররা ঘাপটি মেরে বসে আছে, সুযোগ পেলেই ছোবল মারবে। অন্তর্বর্তী সরকারের অনেক কাজকে তারা বাধাগ্রস্ত করছে। তাই আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দৃষ্টি আকর্ষণ করব, যত দ্রুত সম্ভব সংস্কার করে একটি জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ করুন। ততক্ষণ আমরা আপনাকে সাহায্য করব। আর প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসরদের শনাক্ত করে বিদায় করুন।’
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসক দল আমাদের বুকের ওপর থেকে সরে যাওয়ায় একটা মুক্ত–স্বাধীন ও স্বস্তির বাংলাদেশে আমরা নিশ্বাস ফেলতে পারছি। এর পেছনে রয়েছে হাজার হাজার ছাত্র-জনতার অকুতোভয় চেতনা ও রাজপথে রক্তাক্ত সংগ্রামের ইতিহাস। সর্বোপরি মহান আল্লাহ তাআলার আসমান থেকে নাজিল হওয়া অসীম করুণা, দয়া ও রহমত এর পেছনে রয়েছে।’
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আরও বলেন, ‘আগস্ট বিপ্লবে মানুষ জীবন দিয়েছেন। এর আগে ১৫ বছরে আরও হাজার হাজার মানুষ জীবন দিয়েছেন, শহীদ হয়েছেন। মানুষ গুম হয়েছেন, খুন হয়েছেন, ঘরবাড়ি ছেড়েছেন। মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, কর্ম ও পেশাজীবন ধ্বংস হয়েছে। লুটপাট, হানাহানি, দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও প্রশাসনে দলীয়করণের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, কৃষি, শিল্প–সংস্কৃতিসহ সবকিছু ধ্বংসের প্রান্তসীমায় নিয়ে গিয়েছিল। এর বিরুদ্ধে ১৫ বছরে দেশের কোটি কোটি মানুষের যে সংগ্রাম, সেই সংগ্রাম আজকের বিজয়ের অন্যতম অংশীদার। বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল ১৫ বছর ধরে এই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে। এর আগের মঈন উদ্দিন-ফখরুদ্দীনের দুই বছরও এর সঙ্গে যুক্ত। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টনে লগি-বইঠার বর্বর নিষ্ঠুর আক্রমণ করে আমাদের ভাইদের শহীদ করেছিল। ওই দিন থেকে দেশে ইসলামী আন্দোলনের ওপরে আওয়ামী বামপন্থীদের আক্রমণ শুরু হয়।’
এ সময় আগস্ট আন্দোলনে নিহতদের উদ্দেশে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘তাঁরা যে রক্ত দিয়ে বাংলাদেশ মুক্ত-স্বাধীন করলেন, নতুন বাংলাদেশ দিয়ে গেলেন, ইতিহাসে তাঁদের এই অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। গোটা জাতি ও দুনিয়ার লোক স্মরণ করবেন। তাঁরা রক্ত দিয়ে আমাদের ঋণী করে গেলন। সেই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। শান্তি-সোনার বাংলাদেশ তাঁরা দেখে যেতে পারেননি। তাই সেই বাংলাদেশ গড়ার যে কাজ শুরু হয়েছে। সেই কাজে আমাদের অংশগ্রহণে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়লেই তাঁদের রক্তের ঋণ শোধ হবে।’
নড়াইল জেলা জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ কায়সারের সঞ্চালনায় এ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের পরিচালক মোবারক হোসেন, খুলনা মহানগরের আমির মাহফুজুর রহমান, মাগুরা জেলা আমির এম বি বাকের, সাবেক জেলা আমির মাওলানা র্মিজা আশেকে এলাহি ও মো. নূরুন্নবী জিহাদী, মাগুরা জেলা সেক্রেটারি অধ্যাপক সাইদ আহম্মেদ, নড়াইল জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি আইয়ুব হোসেন খান, জামায়াত নেতা আবদুস সামাদ, আবুল বাশার, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আলমগীর হোসেন, মাওলানা মাহবুবুর রহমান, মো. জাকির হোসেন বিশ্বাস, মুহাম্মদ খিয়াম উদ্দিন, মো. আকিদুল ইসলাম, মো. হেমায়েতুল হক হিমু, মো. মুশফিকুর রহমান, হাফেজ আবদুল্লাহ আল মামুন, মিজানুর রহমান প্রমুখ।