৪০ শতক জমিতে শজনের চাষ করেছেন নবদ্বীপ মল্লিক। সম্প্রতি ডুমুরিয়ায়
ছবি: প্রথম আলো

বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের জন্য ৮ মাস আগে ৪০ শতক জমিতে বারোমাসি শজনেগাছ লাগিয়েছিলেন নবদ্বীপ মল্লিক। ওই বাগানের শজনেপাতার গুঁড়া (পাউডার) তৈরি করে মাসে এখন তিনি আয় করছেন ২০–২৫ হাজার টাকা। আগামী মৌসুমে প্রথমবারের মতো বাগান থেকে পৌনে তিন লাখ টাকার শজনে বিক্রি করার আশা তাঁর।

নবদ্বীপ মল্লিকের (৩৫) বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার বরাতিয়া গ্রামে। এলাকায় আধুনিক কৃষক হিসেবে পরিচিত এই যুবক বলেন, ‘শজনেগাছের কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। দরকার হয় না কোনো রাসায়নিক সারের।’

ডুমুরিয়ার বাগানে ৪০০ গাছ লাগিয়েছেন নবদ্বীপ। আগামী মৌসুমে প্রতি গাছে ১০ থেকে ১৫ কেজি করে শজনে পাওয়ার আশা করে তিনি বলেন, সব মিলিয়ে দেড় মণের মতো শজনে পেলেও বিক্রি করেননি। গড়ে ১০ কেজি করে শজনে পেলে এবং প্রতি কেজি ৭০ টাকা করে বিক্রি করতে পারলে এক মৌসুমে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা আয় করবেন তিনি।

বারোমাসি শজনে ভারতের তামিলনাড়ুর স্থানীয় জাত। দুই বছর আগে তামিলনাড়ু থেকে বীজ সংগ্রহ করেছিলেন জানিয়ে নবদ্বীপ বলেন, ওই বীজ থেকে তৈরি চারা দিয়ে সাতক্ষীরায় যৌথভাবে একটি শজনেবাগান করেন। এ বছরের জানুয়ারিতে ডুমুরিয়ায় গড়লেন নিজের শজনেবাগান।

নবদ্বীপ বলেন, গত মাসে জানতে পারেন, শজনেপাতারও ব্যাপক পুষ্টিগুণ রয়েছে। এরপর যোগাযোগ করেন সাতক্ষীরার ব্যবসায়ী আবু নাসের মোহাম্মদ আবু সাঈদের সঙ্গে। শজনেপাতার গুঁড়ার বিদেশেও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলে নবদ্বীপকে জানান তিনি। গুঁড়া তৈরি করে দিতে পারলে বিদেশে রপ্তানির ব্যবস্থা করার কথা বলেন আবু নাসের। এরপর ৪ জন নারী শ্রমিক কাজে লাগিয়ে বাগান থেকে ১০০ কেজির মতো পাতা সংগ্রহ করেন। ৪ দিন শুকিয়ে গুঁড়া পান ১৮ কেজি। এর মধ্যে ১০ কেজি পাঠিয়ে দেন দুবাইয়ে। চার কেজি সাতক্ষীরার একটি শপিংমলে বিক্রির জন্য দেন। চার কেজি অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করেন। শপিংমলের চার কেজি তিন দিনেই শেষ হয়ে যায়।

নবদ্বীপ বলেন, ‘শজনেপাতার পাউডারের যে এত চাহিদা, তা জানা ছিল না। এত চাহিদা আসছে যে জোগান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

বিদেশে পাঠানো প্রতি কেজি শজনেপাতার গুঁড়ার দাম পেয়েছেন দুই হাজার টাকা। আর স্থানীয় বাজারে মূল্য রাখছেন দেড় হাজার টাকা।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, শজনেকে বলা হয় পুষ্টির আধার। এর পাতায়ও রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ। বাজারে শজনে ও এর পাতার গুঁড়ার ব্যাপক চাহিদা।

নবদ্বীপ শজনেবাগান করে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছেন উল্লেখ করে ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় বারোমাসি শজনেগাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কৃষকদেরও এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।