ভাঙা হচ্ছে ৩৭ লাখের ‘অব্যবহৃত’ ভবন

ফরিদপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার জন্য নির্মিত ৩৭ লাখ টাকার দ্বিতল ভবন। ফরিদপুর শহরের টেপাখোলা লেকের পূর্ব পাড়েছবি: প্রথম আলো

ফরিদপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার আবাসনের জন্য ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা হয় ২০০৯ সালে। এরপর কেটে গেছে ১৫ বছর। কিন্তু আজ পর্যন্ত পরিষদের কোনো কর্মকর্তা ভবনটিতে এক দিনের জন্যও অবস্থান করেননি। অব্যবহৃত অবস্থায় ভবনটি অপসারণের জন্য সাড়ে ৯ লাখ টাকায় নিলামে বিক্রি করেছে জেলা পরিষদ।

ফরিদপুর জেলা পরিষদের মুখপত্র সাপ্তাহিক গণমন পত্রিকায় ১৮ মার্চ জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) শেখ শহীদুল ইসলামের স্বাক্ষরে ‘স্থাপনা নিলাম বিজ্ঞপ্তি’ নামে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এতে জেলা পরিষদের মালিকানাধীন পাঁচটি ভবনকে ‘ব্যবহারের অনুপযোগী জরাজীর্ণ স্থাপনা’ উল্লেখ করে অপসারণ বা বিক্রির দরপত্র আহ্বান করা হয়। বিজ্ঞপ্তির ২ নম্বরে ‘সদর উপজেলার টেপাখোলা লেকসংলগ্ন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন অপসারণের’ কাজের কথা বলা হয়। ওই নিলাম বিজ্ঞপ্তির শিডিউল বিক্রির সর্বশেষ তারিখ ও সময় ধরা হয়েছিল ২৭ মার্চ অফিস চলাকালীন পর্যন্ত। দরপত্র গ্রহণের তারিখ ধরা হয় ২৮ মার্চ বেলা একটা পর্যন্ত। ওই দিন ‘ব্যবহারের অনুপযোগী জরাজীর্ণ স্থাপনা’ হিসেবে ‘বাসভবন অপসারণের’ নিলাম কিনে নেন মো. সুমন নামের এক ঠিকাদার।

আমরা ভবন রাখা বা অপসারণ করার কেউ নই।এ–জাতীয় কোনো পরামর্শও পরিষদকে দিইনি। আপাতত ৫০ কোটি টাকার মধ্যে একটি দরপত্র আহ্বানের উদ্যোগ নিয়েছি। এ জন্য জেলা পরিষদকেজমি বুঝিয়ে দিতে বলেছি। জেলা পরিষদ জমি বুঝিয়ে দিলে কাজহবে, না হলে হবে না।
শহীদুজ্জামান খান, নির্বাহী প্রকৌশলী, এলজিইডি ফরিদপুর

জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, টেপাখোলা লেকের সৌন্দর্যবর্ধন ও উন্নয়নে ১৮০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার জন্য বানানো ভবনটি অপসারণ করা হচ্ছে। ১৫ বছর আগে ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবনটি বানাতে এখন কেমন খরচ হতে পারে, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৮০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা। তিনি বলেন, ‘আমরা ভবনটি রক্ষা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কাজ বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। তারা কাজের স্বার্থে ভবনটি রক্ষা করতে রাজি হয়নি।’

তবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ফরিদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী শহীদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমরা ভবন রাখা বা অপসারণ করার কেউ নই। এ–জাতীয় কোনো পরামর্শও পরিষদকে দিইনি। আপাতত ৫০ কোটি টাকার মধ্যে একটি দরপত্র আহ্বানের উদ্যোগ নিয়েছি। এ জন্য জেলা পরিষদকে জমি বুঝিয়ে দিতে বলেছি। জেলা পরিষদ জমি বুঝিয়ে দিলে কাজ হবে। না হলে হবে না।’ তিনি বলেন, টেপাখোলা লেক উন্নয়নে চার বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের মেয়াদকাল আগামী ৩০ জুন শেষ হয়ে যাবে। প্রকল্পের অবস্থা শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়ায়, সে বিষয়ে তিনি সন্দিহান।

জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বাকাহীদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ভবনটি রক্ষার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রক্ষা করতে পারেননি। প্রকল্প পরিচালক কোনোভাবে ভবনটি রেখে কাজ করতে সম্মত হননি। এটি রাষ্ট্রীয় অপচয় কি না, তা জানতে চাইলে বলেন, বড় উন্নয়নের জন্য অনেক সময় ছোট স্বার্থ ত্যাগ করতে হয়।

সরকারি অর্থে নির্মিত ভবন ব্যবহারের আগে অপসারণকে রাষ্ট্রীয় অপচয় বলেছেন ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের সভাপতি আওলাদ হোসেন। তিনি বলেন, যে যুক্তিই দেখানো হোক, এটা রাষ্ট্রীয় অপচয়। যে কর্মকর্তাদের জন্য ১৫ বছর আগে ভবনটি বানানো হলো, তাঁরা কেউ ব্যবহার করলেন না। ভবনটি পরিত্যক্ত থাকায় মাদকসেবীদের আখড়া হয়ে গেল। এরপর জানা গেল, দর্শনার্থীদের জন্য বিশ্রামাগার হবে, সেটাও হলো না। এখন নিলামে ভবনটি অপসারণ করা হচ্ছে। এমন অপচয় মেনে নেওয়া যায় না।