স্বামী–স্ত্রী দুজনেরই উচ্চতা চার ফুটের কাছাকাছি। শারীরিক এই বৈশিষ্ট্য তাঁদের সংসার কোনো সমস্যা তৈরি করেনি। অভাব–অনাটনের মধ্যেও দুই দশকের সুখের সংসার তাঁদের।

ওই দম্পতি হলেন নীলকান্ত বর্মণ (৪২) ও গীতা রানী (৩৬)। ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলার বোচাপুকুর জোদ্দারপাড়া গ্রামে তাঁদের বসবাস।

গতকাল সোমবার নীলকান্ত ও গীতার সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তখন দুজন মিলে পাশের একটি জমিতে আলু তোলার কাজ করছিলেন। গীতা জানালেন, নীলকান্ত জমির মালিকের সঙ্গে আলু তোলার চুক্তি করেছিলেন। কাজ করতে গিয়ে একা পারছিলেন না। পরে তিনিও এই কাজে যোগ দেন। গীতা বলেন, ‘সংসারখান তো খালি ওমার না (নীলকান্ত)। হামারও। আমি কাজখান করে দিলে ক্ষতি কি?’

২২-২৩ আগে এই দম্পতির বিয়ে হয়। তাঁদের একটি মাত্র মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। নীলকান্ত জানালেন, পরিবারের লোকজন তাঁর বিয়ের জন্য মেয়ে দেখা শুরু করেন। কিন্তু খর্বাকায় হওয়ায় মেয়ে পক্ষ রাজি হয়নি। এমন বিড়ম্বনার মধ্যে শেষমেশ সদর উপজেলার পোকাতি গ্রামের ধীরেন চন্দ্র বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসেন। সম্বন্ধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয় তাঁর মনে। তবে ধীরেন যখন মেয়ের খর্বাকৃতির কথা খুলে বললেন, তখন মন থেকে সেই ভয় দূর হয়ে যায়। হবু বউকে এক নজর দেখার জন্য নীলকান্ত ছুটে যান পুরাতন ঠাকুরগাঁওয়ে গীতাদের বাড়ির এলাকায়। ঘুরতে ফিরতে থাকেন বাড়ির সামনে। গীতাকে এক নজর দেখেই ভালো লেগে যায়। বাড়ি ফিরেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে সায় দেন তিনি।

২০০১ সালের শেষের দিকে নীলকান্ত ও গীতার বিয়ে হয়। খর্বাকৃতি নিয়ে তাঁদের দুজনের মধ্যে কোনো সমস্যা হয়নি। গীতা বলেন, ‘স্বামী বেঁটে একথা বিয়ের আগত শুনেছিনু। তবে দুজনের এতখান মিল হবে ভাবিবা পারুনি।’

বিয়ের পরের বছর একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন গীতা। তাঁরা মেয়ের নাম রাখেন লিপা রানী। গত বছর লিপার বিয়ে হয়ে গেছে। সংসারে এখন শুধু তাঁরা দুজন।

গ্রামের আশপাশে কৃষি মজুরের কাজ করে সংসার চলে নীলকান্ত-গীতার। খর্বাকায় দেহের কারণে স্বাভাবিক মজুরের হাজিরার তুলনায় তাঁরা ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কম পান। কথায় কথায় শ্রমের মজুরি নিয়ে আক্ষেপের কথাও শোনালেন তাঁরা। পুতুল রানী নামে এক প্রতিবেশি বলেন, ‘শ্রীকান্ত আর গীতা বিয়ের পর দুজন দুজনকে যেমন ভালোবাসতেন এখনো তেমনি ভালোবাসেন। তাঁদের মধ্যে কখনো ঝগড়া দেখিনি।’