‘দেশে প্রতিবছর প্রায় ৩ কোটি মানুষ খাদ্যজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে’
বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৩০ মিলিয়ন (৩ কোটি) মানুষ খাদ্যজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহারে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রতিবছর ১০ মিলিয়ন (১ কোটি) মানুষ মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়তে পারে। জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে দেশে কোভিড-১৯, হাইপ্যাথোজেনিসিটি এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা (এইচপিএআই), নিপাহ, লাম্পি স্কিন ডিজিজসহ নানা রোগ দ্রুত ছড়াচ্ছে। বিভিন্ন রোগের কারণে কৃষক বাধ্য হয়ে দ্রুত গবাদিপশু বিক্রি করছেন, যা অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হচ্ছে।
দেশের ভেটেরিনারিয়ানদের সবচেয়ে বড় বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে (কনফারেন্স) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে এসব তথ্য উঠে এসেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) জ্যেষ্ঠ প্রাণী উৎপাদন ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ শামছুদ্দিন এই প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এতে উপস্থাপিত সমস্যাগুলো সমাধানে জলবায়ু সহনশীল কৃষি ও প্রাণিসম্পদ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান অধ্যাপক শামছুদ্দিন। সেই সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিকের অবাধ ব্যবহার বন্ধ করে নিরাপদ খাদ্যনীতি বাস্তবায়ন এবং আবহাওয়ার পূর্বসংকেতসহ হাইড্রোপনিক ফসল, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি গ্রহণ করার পরামর্শ দেন তিনি। এ ছাড়া তিনি কৃষকদের ভর্তুকি ও সরকারি সেবা বাড়ানোর প্রতি জোর দেন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলন আজ শনিবার শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ সোসাইটি ফর ভেটেরিনারি এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের (বিএসভিইআর) আয়োজনে এই সম্মেলনে দেশের ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয় ও ছয়টি প্রতিষ্ঠানের গবেষক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন। বিএসভিইআরের ৩১তম এই বার্ষিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘প্রাণীর স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব’।
আজ সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া। এ সময় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. বাহানুর রহমান, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবু সুফিয়ান, ফ্লেমিং ফান্ড কান্ট্রি গ্রান্ট টু বাংলাদেশের টিম লিডার অধ্যাপক শাহ মনির হোসাইন এবং ইন্টার অ্যাগ্রো বিডির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম খশরুজ্জামান। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও ভেটেরিনারি নীতি-নির্ধারকসহ পাঁচ শতাধিক ব্যক্তি সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯জন সাবেক অধ্যাপককে প্রাণিবিজ্ঞান গবেষণায় অসামান্য অবদানের জন্য সম্মাননা প্রদান করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) জ্যেষ্ঠ প্রাণী উৎপাদন ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ শামছুদ্দিন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, প্রাণিসম্পদের উন্নয়নে প্রয়োজন গবাদিপশুর সংখ্যা, গুণগত মান, রোগ প্রতিরোধ, খামারির দক্ষতা ও ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন। শিক্ষার্থীদের শেখার প্রতি অনুরাগী হতে হবে এবং খামারিদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়াতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোর্স-কারিকুলাম নিয়মিত হালনাগাদ করা জরুরি। ভেটেরিনারি পেশাজীবীদের মাসে একবার হলেও সভা করে সমসাময়িক সমস্যা, নীতি ও সমাধান নিয়ে আলোচনা করা উচিত। পুঁথিগত জ্ঞান বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ না রেখে কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে হবে।
বিএসভিইআরের সভাপতি অধ্যাপক মো. আলিমুল ইসলাম বলেন, শুধু প্রাণিজ উৎপাদন নয়, প্রাণিসম্পদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও এখন জরুরি। এ লক্ষ্যে এবারই প্রথমবারের মতো উদ্যোক্তা সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীরা চাকরির বাইরে প্রাণিসম্পদের উন্নয়ন নিয়ে বিকল্প ভাবতে পারেন। গবেষণা কাজে শিক্ষার্থী ও গবেষকদের উৎসাহ দিতে সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের ১২টি কারিগরি সেশনে ৯০টি মৌখিক ও ১৬২টি পোস্টার উপস্থাপিত হবে। এর মধ্যে সেরা গবেষণাকাজকে পুরস্কৃত করা হবে বলে জানান তিনি।