মাদ্রাসা সভাপতির বিরুদ্ধে চোরাচালান মামলা, প্রত্যাহারের দাবিতে শিশুশিক্ষার্থীদের দিয়ে মানববন্ধন
ফেনীর পরশুরাম উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব ও সাতকুচিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি তারেক হোসেনের বিরুদ্ধে চোরাচালানের মামলা করার প্রতিবাদে মানববন্ধন হয়েছে। এতে মাদ্রাসার শিশুশিক্ষার্থীদের ডেকে এনে দাঁড় করিয়ে রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকেরা।
সোমবার দুপুর ১২টা থেকে মাদ্রাসা ভবন–সংলগ্ন পরশুরাম-বক্সমাহমুদ প্রধান সড়কে এ মানববন্ধন শুরু হয়ে বেলা দেড়টা পর্যন্ত চলে। এই দীর্ঘ সময়ে চার-পাঁচ বছরের শিশুশিক্ষার্থীদের দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এ সময় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও চোরাচালান মামলার প্রধান আসামি তারেক হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনী জেলা প্রশাসক (ডিসি) মনিরা হক বলেন, ‘শিশুশিক্ষার্থীদের দিয়ে মানববন্ধন করানোটা মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের ঠিক হয়নি। ঘটনাটি আমরা জানতে পেরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে মাদ্রাসায় পাঠিয়ে মানববন্ধন বন্ধ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে যেন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এমন কোনো কাজ না করে, এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
পুলিশ জানায়, গত ২৬ অক্টোবর ফুলগাজীতে ভারতীয় অবৈধ পণ্যবোঝাই পিকআপের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক নিহতের ঘটনা ঘটে। পরে ওই পিকআপ থেকে ভারতীয় শাড়ি জব্দের ঘটনায় পরশুরাম উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব তারেক হোসেনসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেন।
মামলায় তারেক হোসেনকে আসামি করার প্রতিবাদে আজ ‘সাতকুচিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সদস্য, শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীবৃন্দের’ ব্যানারে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মানববন্ধনে শিশুশিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল বেশি। দীর্ঘ সময় ধরে শিশুদের সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক অভিভাবক। তবে তাঁরা নিজেদের নাম প্রকাশে রাজি হননি।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, সোমবার সকালে একটি ক্লাস শেষ করে আরেকটি ক্লাস করার আগে শ্রেণিকক্ষে গিয়ে শিক্ষকেরা তাদের বের হয়ে সড়কের দিকে যেতে বলেন। কেন বা কী জন্য তাদের সড়কে এনে লাইনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে, তা-ও জানে না কোনো কোনো শিক্ষার্থী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক অভিভাবক বলেন, ‘আমরা বাচ্চাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠিয়েছি পড়ালেখার জন্য। তাদের দিয়ে মানববন্ধন করানো অন্যায়। এটা কোনোভাবে মেনে নিতে পারি না। তা ছাড়া সেখানে যদি কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটত, তাহলে আমাদের শিশুদের নিরাপত্তার দায়িত্ব কে নিত?’
মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আবদুর রশিদ বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের সভাপতি একজন ভালো মানুষ। তিনি চোরাচালানে জড়িত নন। তাই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের যৌথ আয়োজনে মানববন্ধন করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মাদ্রাসার ম্যানেজিং (পরিচালনা) কমিটির সদস্যদের অনুমতি নিয়েই শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে পাঠানো হয়েছে। এটা আমার একক কোনো সিদ্ধান্ত নয়।’
এ বিষয়ে মাদ্রাসার সভাপতি ও উপজেলার স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা তারেক হোসেনের বক্তব্য জানতে তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়ায় যায়।
এর আগে মো. তারেক হোসেনের বিরুদ্ধে চোরাচালান পণ্য জব্দের ঘটনায় মামলা করার প্রতিবাদে গত ৩০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার পরশুরাম উপজেলা বিএনপির নেতারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। ওই দিন বিকেলে পরশুরাম অডিটরিয়ামে এ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের বিএনপি নেতারা দাবি করেছেন, ষড়যন্ত্র করে তারেককে ফাঁসানো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল হালিম মানিক।