৪৮ বছর পর ফিরে আসা আমজদ আলীর সাক্ষাৎকার

হারিয়ে যাওয়া স্ত্রীর জন্য মন কাঁদছে, দেখা হলে ভুল শুধরে নিতাম

আমজদ আলী
৪৮ বছর আগে স্ত্রী হাজেরা খাতুনের সঙ্গে রাগ করে জন্মভিটা ময়মনসিংহের তারাকান্দা থেকে ভারতে চলে গিয়েছিলেন আমজদ আলী। সেখানে গিয়ে বিয়ে করে স্থায়ী হন তিনি। সেই সংসারে এক ছেলে ও তিন মেয়ে। দেশে রেখে যাওয়া স্ত্রীর একমাত্র সন্তান সিলেটে স্থায়ী হয়েছেন। এত দিন পর তিনি স্ত্রী–সন্তানদের খোঁজে বাংলাদেশে ফিরেছেন। এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন প্রথম আলোর সিলেট প্রতিনিধি মানাওবী সিংহ।

প্রশ্ন :

দীর্ঘ দিন পর বাংলাদেশে এসেছেন। সন্তান ও নাতি-নাতনিদের পেয়ে কেমন লাগছে?

আমজদ আলী: প্রায় চার যুগ পর ছেলেকে খুঁজে পেয়েছি। এত আনন্দ লাগছে, ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। ছেলের সঙ্গে নাতি-নাতনিদের পেয়ে আরও ভালো লাগছে। ভারতে থাকলেও দেশের পরিবারের জন্য মন কাঁদত। এ জন্যই দীর্ঘদিন পর স্ত্রী-সন্তানের খোঁজে দেশে ফিরেছি।

প্রশ্ন :

মনে পড়ে কেন ঘর ছেড়ে গিয়েছিলেন?

আমজদ আলী: ঠিক মনে নেই, কী নিয়ে রাগারাগি হয়েছিল। এরপর ঘর ছেড়ে ছিলাম। অনেক বছর আগের কথা। এখন আর ঠিকঠাক মনে পড়ছে না।

আরও পড়ুন

প্রশ্ন :

ভারতে যাওয়ার পর কী করেছেন? সেখানে স্থায়ী হলেন কীভাবে?

আমজদ আলী: সে সময় ময়মনসিংহ এলাকা দিয়ে ভারতে গিয়েছিলাম। কিছু দিন ঘুরে আসামের তেজপুরে গিয়ে শ্রমিকের কাজ করেছি। সেখানেই পরিচয়ের সূত্র ধরে সমরজান বিবিকে বিয়ে করে স্থায়ী হয়েছি। ওই সংসারে এক ছেলে ও তিন মেয়ে। তাঁদের সবার বিয়ে হয়েছে। নাতি-নাতনি আছে। স্ত্রী মারা গেছেন ১৪-১৫ বছর আগে।

প্রশ্ন :

ভারতের পরিবারের সদস্যরা কি জানতেন বাংলাদেশে আরেক পরিবার আছে?

আমজদ আলী: সমরজান জানতেন, দেশে আমার স্ত্রী ও সন্তান আছে। বেঁচে থাকতে একাধিকার স্ত্রী-সন্তানদের খোঁজ নিতে এই দেশে আসতে বলেছিলেন। ভারতের ছেলে–মেয়েরা দেশে থাকা ছেলে কালা মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ভিডিও কলে কথা বলেছে। তাকে ভারতে নিয়ে যেতে বলেছে।

প্রশ্ন :

এখন আর কোনো আক্ষেপ আছে?

আমজদ আলী: জেদের কারণে দীর্ঘ দিন ছেলে আমার মায়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে। মাকেও হারিয়েছে। জেদ না করলে অন্য রকম হতে পারত। আক্ষেপ বলতে এখন হারিয়ে যাওয়া স্ত্রীর জন্য মন কাঁদছে। তাঁর সঙ্গে দেখা হলে নিজের ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার সুযোগ পেতাম। এতে মনে শান্তি পেতাম।

প্রশ্ন :

এখন কি ভারতে ফিরে যাবেন?

আমজদ আলী: এখন যেহেতু আমি ভারতের নাগরিক, ভারতে ফিরে যেতে হবে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে ভারতে ফিরে যাব। এর আগে ময়মনসিংহে ছেলেকে নিয়ে যাবে। সেখানে নিজের ভিটেবাড়ি ঘুরে দেখব। সেখান থেকে ভারত থেকে আসা আরও কয়েকজন আছেন, তাঁদের সঙ্গে ফিরে যাব।

প্রশ্ন :

বাংলাদেশে আর আসবেন?

আমজদ আলী: বয়স হয়েছে। এই বয়সে এসে ছেলে এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের ফিরে পেয়ে ছেড়ে যেতে মন চাইছে না। তবে ফিরে গিয়ে আবার আসার পরিকল্পনা আছে। ছেলে ও নাতি-নাতনিদের পাসপোর্ট বানিয়ে ভারতে যাওয়ার জন্য বলেছি। তারাও প্রস্তুতি শুরু করেছে। আমি না থাকার পরও দুই পরিবার যেন নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখে, এটা চাই।

প্রশ্ন :

ছেলে কী বলছে?

আমজদ আলী: ছেলে আমাকে পেয়ে অনেক খুশি হয়েছে। আগে আমাকে নিয়ে নাকি তার অভিমান ছিল। কিন্তু আমাকে কাছে পাওয়ার পর সে সবকিছু ভুলে গেছে। প্রতিদিন আমাকে খাইয়ে দেওয়া, গোসল করিয়ে দেওয়াসহ সবকিছু খেয়াল করছে।