উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: কিশোরগঞ্জে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ

উপজেলা পরিষদের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর কিশোরগঞ্জে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। জেলার সদর উপজেলাসহ তিনটি উপজেলায় বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া। তিনটি উপজেলায় ডজনের বেশি চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রচারণায় নেমে পড়েছেন। জানান দিচ্ছেন নিজেদের উপস্থিতি।

এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হবে চারটি ধাপে। প্রথম ধাপে ১৫২টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে গত বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এসব উপজেলায় ভোট গ্রহণ হবে আগামী ৮ মে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে কারা প্রার্থী হবেন, তা নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ।

৮ মে প্রথম ধাপে কিশোরগঞ্জ সদর, পাকুন্দিয়া ও হোসেনপুর উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে ঘিরে তাঁদের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
মোহাম্মদ মোরশেদ আলম, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির বেশির ভাগ নেতা এখনো নীরব রয়েছেন। তবে দলটির কেউ কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছেন নিজেদের মতো করে। যেমন পাকুন্দিয়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. কামাল উদ্দিন নির্মাচনে দাঁড়াবেন বলে মনস্থির করেছেন। এ বিষয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোটারদের সমর্থন নিয়ে আগে থেকেই আমি নির্বাচনী মাঠে কাজ করছি। দল যদি কঠোরভাবে বাধা না দেয়, তাহলে আমি নির্বাচন করব।’

নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন হোসেনপুর উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আলমও।

তবে জাতীয় নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনও বিএনপি প্রত্যাখ্যান করতে পারে বলে জানিয়েছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মাজহারুল ইসলাম। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, বিএনপি সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছে। ভোটাররা যাতে ভোট কেন্দ্রে না আসতে পারে সেজন্য প্রচারপত্র বিলসহ নানা কৌশল অবলম্বন করছে। জনগণও নির্বাচন প্রত্যাখান করেছে। উপজেলা পরিষদের নির্বাচনেও এমনটি হতে পারে।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে কাউকে প্রার্থী করছে না। নির্বাচন উন্মুক্ত রাখার কৌশল নিয়েছে। এ বিষয়ে প্রথম আলোকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ আফজল বলেন, দল থেকে কাউকে সুনির্দিষ্ট বা মৌন সমর্থন দেওয়া হবে না। যেহেতু বিএনপি নির্বাচনে আসছে না, তাই একটি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন করতেই কৌশল হিসেবে দলীয় প্রতীক নৌকা রাখা হচ্ছে না।

নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার পরের দিন গত শুক্রবার থেকে সর্বত্র সম্ভাব্য প্রার্থী এবং তাঁদের কর্মীদের তৎপরতা দেখা গেছে।

নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী আগামী ৮ মে কিশোরগঞ্জের তিনটি উপজেলা পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে রয়েছে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা, পাকুন্দিয়া উপজেলা ও হোসেনপুর উপজেলা। তিনটি উপজেলাতেই বর্তমান চেয়ারম্যানসহ ডজনখানেকের ওপর চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তা ছাড়া দুই ডজনের ওপর প্রার্থী ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

সম্ভাব্য বিভিন্ন প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মামুন আল মাসুদ খান আবারও প্রার্থী হবেন। শুক্রবার থেকে সদরের বিভিন্ন ইউনিয়নে তিনি প্রচারণা চালান। এ ছাড়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বৌলাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আওলাদ হোসেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবদুস সাত্তার ও সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রিফাত উদ্দিন আহমেদ প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রফিকুল ইসলাম শুক্রবার উপজেলার কোদালিয়া এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় পথসভা ও নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন। এ ছাড়া এ উপজেলা থেকে জেলা শ্রমিক লীগের উপদেষ্টা আতাউল্লাহ সিদ্দিক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মকবুল হোসেন, স্থানীয় হাজী জাফর আলী ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক আতাউর রহমান প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

হোসেনপুর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোহেল আবারও প্রার্থী হতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া এখানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ মাহবুবুল হক, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এম এ হালিম, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান, উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আলম, নারী ভাইস চেয়ারম্যান রৌশনারা চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে ইচ্ছুক।

কিশোরগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোরশেদ আলম বলেন, আগামী ৮ মে প্রথম ধাপে কিশোরগঞ্জ সদর, পাকুন্দিয়া ও হোসেনপুর উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে ঘিরে তাঁদের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।