কলেজে ভর্তি হতে গিয়ে সাইবার নিরাপত্তা আইনে শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার, ফাঁসানোর দাবি মা-বাবার

গ্রেপ্তার
প্রতীকী ছবি

ময়মনসিংহের নান্দাইলের সরকারি শহীদ স্মৃতি আদর্শ ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হতে যাওয়া এক শিক্ষার্থীর (১৬) বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কম্পিউটার সিস্টেমে বেআইনিভাবে প্রবেশ করে তথ্য পরিবর্তনের অভিযোগে এই মামলা হয়েছে। নান্দাইল মডেল থানার পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে গত বুধবার আদালতের মাধ্যমে গাজীপুরের সংশোধনাগারে পাঠিয়েছে।

ওই শিক্ষার্থীর বাড়ি নান্দাইল পৌরসভার একটি এলাকায়। তার মা–বাবা দাবি করেছেন, পছন্দের কলেজে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার কথা বলে একটি চক্র ওই শিক্ষার্থীকে ফাঁসিয়েছে।

ওই শিক্ষার্থী এসএসসি পাস করার পর পছন্দের কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার জন্য চেষ্টা করছিল। শিক্ষার্থীর মা বলেন, প্রথমবারের আবেদনে তাঁর ছেলে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর কলেজে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করে। কিন্তু দূরত্বের কারণে সে ওই কলেজে ভর্তি চূড়ান্ত করেনি। পরে সে দ্বিতীয় ও তৃতীয়বারের আবেদন করে। কিন্তু দুবারই নান্দাইল উপজেলার খুররম খান চৌধুরী ডিগ্রি কলেজ আসে। কিন্তু তাঁর ছেলের পছন্দ ছিল নান্দাইল শহীদ স্মৃতি আদর্শ ডিগ্রি কলেজ।

শিক্ষার্থীর বাবা পেশায় একজন ট্রলিচালক। তিনি বলেন, এক প্রতিবেশী তাঁর ছেলেকে পছন্দের কলেজে ভর্তির বিষয়ে সহায়তা করতে পারবেন জানিয়ে ১০ হাজার টাকায় চুক্তি করেন। এ বিষয়ে কথাবার্তা পাকাপাকি হওয়ার পর নান্দাইল শহীদ স্মৃতি আদর্শ ডিগ্রি কলেজের একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থী তাঁর ছেলেকে একটি তালিকা দিয়ে ২৬ সেপ্টেম্বর ভর্তি হওয়ার জন্য নান্দাইল কলেজে পাঠায়। তালিকাটি নিয়ে সে কলেজে যায় ভর্তি হওয়ার জন্য। কিন্তু কলেজে সংরক্ষিত তালিকায় তার নাম ছিল না। এ নিয়ে সন্দেহ তৈরি হলে কলেজ কর্তৃপক্ষ ভর্তিসংক্রান্ত ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে দেখতে পায় ভর্তি তালিকায় তার নাম রয়েছে।

নান্দাইল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বাদল কুমার দত্ত মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, কলেজে সংরক্ষিত তালিকায় ওই শিক্ষার্থীর কোনো তথ্য ছিল না। সে কীভাবে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে নিজের নাম সংযোজন করেছে, তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। বিষয়টি পুলিশকে জানানোর পর তারা আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে।

এ ঘটনায় কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক মো. আতিকুর রহমান বাদী হয়ে গত বুধবার ওই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার প্রাথমিক তথ্যবিবরণীতে দেখা যায়, ওই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে কম্পিউটার সিস্টেমে বেআইনিভাবে প্রবেশ করে উপাত্তভান্ডারের তথ্য পরিবর্তন, সংযোজন, ক্ষতিসাধন ও সহায়তা করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

এদিকে এ ঘটনায় কলেজের খণ্ডকালীন কম্পিউটার অপারেটর মো. আসাদুজ্জামান ওরফে সাজুকে থানায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। কলেজের একটি সূত্র জানায়, ভর্তিসংক্রান্ত ওয়েবসাইটে লগইন করার পাসওয়ার্ড আসাদুজ্জমান জানেন। তবে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁকে কলেজ কর্তৃপক্ষের জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নান্দাইল মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. ওবায়দুর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আসাদুজ্জামান কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ভর্তি জালিয়াতির ঘটনায় আসাদুজ্জামানের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাঁকেও মামলায় আসামি করা হতে পারে।