প্রধানমন্ত্রী, আসুন, দেখে যান বেনজীর কীভাবে সংখ্যালঘুদের জমি দখল করেছেন

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় বেনজীরের সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্ক এলাকার ভুক্তভোগীদের বিষয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্তছবি: প্রথম আলো

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে গোপালগঞ্জের হিন্দুদের ‘শত শত বিঘা’ জমি দখলের অভিযোগ এনে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ওই এলাকা ঘুরে দেখার অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কৃষির ওপর নির্ভরশীল ওই এলাকার মানুষদের জমি দখল করে ফেলায় তাঁদের দৈনন্দিন জীবনে বিশাল অর্থনৈতিক সংকট নেমে এসেছে।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন গোপালগঞ্জের সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্ক এলাকা পরিদর্শন ও ভুক্তভোগী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বলার পর সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন রানা দাশগুপ্ত।

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের এই নেতা বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এলাকাটি আপনারই। আপনি একবার এলাকায় আসুন, আপনি দেখে যান, কীভাবে এখানকার সংখ্যালঘুদের জায়গা-জমি জবরদখল করেছেন বেনজীর আহমেদ। আমরা দাবি ও আবেদন জানাই, যাঁদের সম্পত্তিগুলো দখল করা হয়েছে, তাঁদের সম্পত্তিগুলো ফেরত দেওয়া হোক।’

আরও পড়ুন

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৫ থেকে ২০২০ সালে র‍্যাবের মহাপরিচালক এবং ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আইজিপি থাকার সময়ে বেনজীর আহমেদ গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বৈরাগীটোল গ্রামে ৬২১ বিঘা (দুদকের তথ্য অনুযায়ী) জমির ওপর গড়ে তোলেন সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্ক। এ রিসোর্ট ও পার্কের সব জমি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাঁদের ভাষ্য, ভয় দেখিয়ে, জোর করে ও নানা কৌশলে জমি কেনা হলেও অনেক জমি দখল করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত শুরু করে। পরে সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্কসহ বিভিন্ন স্থাপনা জব্দের নির্দেশ দেন আদালত।

এলাকাটি শতভাগ হিন্দুপ্রধান মন্তব্য করে রানা দাশগুপ্ত বলেন, তাঁদের শত শত বিঘা জমি জোর করে, হুমকি দিয়ে, নানাভাবে চক্রান্ত করে বেনজীর দখল করে নিয়েছেন। শুধু দখলই করেননি, কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে এমনভাবে চারদিকে বেষ্টনী করেছেন, যাতে অন্য কেউ ওই জায়গায় প্রবেশ করতে না পারে।

আরও পড়ুন

র‍্যাবের মহাপরিচালক ও পুলিশের মহাপরিদর্শক হিসেবে বেনজীর আহমেদ যে ভূমিকা পালন করছেন, তা শুধু সরকারের ভাবমূর্তিই ক্ষুণ্ন করেনি, গোটা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন করেছে বলে মন্তব্য করেন রানা দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘আমাদের মনে হয়, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাগুলো এদের (বেনজীর ও জেনারেল আজিজ) কারণেই হয়েছে। হয়তো নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সময় আমরা এই বিষয়গুলো জানতাম না বলেই অনেক সময় মনে করেছি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশবিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সমালোচনা করে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের এই নেতা বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বেনজীর ও আজিজ যা করেছেন, সেটা ওনাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। এখানে রাষ্ট্রের কোনো বিষয় না। এ বিষয়গুলোকে ব্যক্তিগত বিষয় হিসেবে চেপে রাখার কোনো বাস্তবতা নেই। আজকে তাঁদেরও বলা উচিত, এই মামলা চলমান থাকা অবস্থায় কী করে তাঁরা (বেনজীর-আজিজ) এ দেশ থেকে চলে গেলেন?’

আরও পড়ুন

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার পাল, মনিন্দ্র কুমার নাথ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অনুপ কুমার সাহা, পরিষদের গোপালগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি প্রদীপ কুমার বিশ্বাস, সহসভাপতি শিপ্রা বিশ্বাস, সদস্য ডেভিড বৈদ্য প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।