খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব কবে নিচ্ছেন তালুকদার খালেক

তালুকদার আবদুল খালেক
ছবি: প্রথম আলো

খুলনা সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক গতকাল সোমবার শপথ নিয়েছেন।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকাল ১০টায় তাঁর কার্যালয়ের শাপলা হলে এক অনুষ্ঠানে তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করান। কিন্তু সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব নিতে তাঁকে অপেক্ষা করতে হতে পারে অক্টোবর পর্যন্ত। ১১ অক্টোবর বর্তমান পরিষদের মেয়াদ শেষ হবে।

১১ অক্টোবরের আগেই যেকোনো সময় দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে বলে মনে করছেন তালুকদার আবদুল খালেক। তিনি গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, যেহেতু খুলনা সিটি করপোরেশনে বর্তমানে কোনো মেয়র নেই, তাই যেকোনো সময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। তবে কাউন্সিলরদের দায়িত্ব নিতে হবে ১১ অক্টোবরের পর।

তালুকদার আবদুল খালেক খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। ২০১৮ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। এবারও আওয়ামী লীগ থেকে তাঁকে মেয়র প্রার্থী করা হয়। এ জন্য নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে ১১ মে তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। এ কারণে তিনি এখন সিটি করপোরেশনের দায়িত্বে নেই। বর্তমানে সিটি করপোরেশনের পরিচালনা-সংক্রান্ত দায়িত্ব পালন করছেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কার তাজুল ইসলাম।

লস্কার তাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নবনির্বাচিত মেয়র গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কাছে শপথ নিয়েছেন। তবে বর্তমান পরিষদের দায়িত্ব শেষ হবে আগামী ১১ অক্টোবর। নিয়মানুযায়ী ওই সময়ের পর যেকোনো দিন সাধারণ সভার মধ্য দিয়ে সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব নেওয়ার কথা নবনির্বাচিত মেয়রের। তবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় চাইলে যেকোনো সময় চিঠি দিয়ে মেয়রকে দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলতে পারেন।

গত ১২ জুন খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। মেয়র পদে মোট পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮২৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন তালুকদার আবদুল খালেক। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আবদুল আউয়াল পেয়েছেন ৬০ হাজার ৬৪ ভোট। অন্য তিন প্রার্থী মোট প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগ ভোট না পেয়ে জামানত হারিয়েছেন।

শপথ নেননি ৩ কাউন্সিলর

খুলনা সিটি করপোরেশনে ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে। গতকাল একই স্থানে ওই ওয়ার্ডগুলোর নির্বাচিত কাউন্সিলরদের শপথবাক্য পাঠ করিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। তবে তিনজন কাউন্সিলর শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি। এর মধ্যে দুজন কোভিডে আক্রান্ত। অন্যজন হজ পালনে দেশের বাইরে রয়েছেন।

তালুকদার আবদুল খালেক প্রথম আলোকে বলেন, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর শেখ শামসুদ্দিন আহম্মেদ এবারও কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি হজ পালন করতে গেছেন। শামসুদ্দিন আহম্মেদ ছাড়া সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ৪০ জন কাউন্সিলর শপথ নিতে খুলনা থেকে ঢাকায় গিয়েছিলেন। কিন্তু পরীক্ষায় কোভিড পজিটিভ হওয়ায় সাধারণ ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর শেখ হাসান ইফতেখার ও সংরক্ষিত ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাহমুদা বেগম শপথ নিতে পারেননি।

এবার খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাধারণ ওয়ার্ডে অর্ধেকের বেশি বর্তমান কাউন্সিলর পদ হারিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে কাউন্সিলর হিসেবে থাকা ব্যক্তিরাও রয়েছেন ওই দলে। আর একটি বাদে সব ওয়ার্ডে জিতেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই।

গতবার নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেছিল। প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই ছিল বিএনপির প্রার্থী। সেবার কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের ১৩ জন, বিএনপির ৯ জন ও অন্যান্য ৯ জন প্রার্থী বিজয়ী হয়েছিলেন। দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে এবার বিএনপির ৫ জন কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছিলেন। এর মধ্যে তিনজন বর্তমান কাউন্সিলর। বিজয়ীদের কাতারে বিএনপির কোনো প্রার্থীই নেই। এবার ১৬ জন নতুন কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন আর ১৫ জন আগের অবস্থান ধরে রেখেছেন। এর মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন দুই কাউন্সিলর।