বঙ্গোপসাগর থেকে মাছ শিকার শেষে ট্রলারে টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ ঘাটে ফেরার পথে গুলিতে বাংলাদেশি দুই জেলে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ট্রলার মাঝি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, নাফ নদীর মিয়ানমার অংশে থাকা একটি জাহাজ থেকে গুলি ছোড়া হয়েছে।
আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথের শাহপরীর দ্বীপ বদরমোকাম এলাকায় (বঙ্গোপসাগর ও নাফ নদীর মোহনার চ্যানেল) এ ঘটনা ঘটে। বদরমোকামের বিপরীতে (নাফ নদীর ওপারে) মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা। সেখানে আগে থেকে মিয়ানমারের নৌবাহিনীর একটি জাহাজ অবস্থান করছিল।
গুলিবিদ্ধ জেলেরা হলেন টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহ পরীর দ্বীপ হাজীপাড়া বাসিন্দা মো. ছিদ্দিকের ছেলে মো. ফারুক (২৭) ও একই ইউনিয়নের উত্তরপাড়ার মোহাম্মদ আলীর ছেলে মো. ইসমাইল (২০)। গুলিতে ফারুকের ডান পায়ে তালু, বাঁ পায়ের হাঁটু , বাঁ হাতের আঙুল বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ইসমাইল পা ও হাতে আঘাত পান। দুপুরে ট্রলারের অন্যান্য জেলেরা গুলিবিদ্ধ দুই জেলেকে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সুরাইয়া নাজনীন বলেন, দুপুরে গুলিবিদ্ধ দুজনকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে অবস্থার অবনতি হওয়ায় গুলিবিদ্ধ মো. ফারুককে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ট্রলারের মালিক ও শাহ পরীর দ্বীপ মাঝেরপাড়ার বাসিন্দা কবির আহমেদ ছেলে মো. ছিদ্দিক বলেন, এফবি মায়ের দোয়া নামে ট্রলারটি ১৮ এপ্রিল সকালে শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাট থেকে বঙ্গোপসাগরের সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমে বাংলাদেশ জলসীমানায় মাছ ধরতে যায়। ট্রলারে জেলে ছিলেন ৯ জন। আজ সকালে মাছ নিয়ে ট্রলারটি শাহপরীর দ্বীপ ঘাটে ফিরছিল। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ট্রলারটি বদরমোকাম চ্যানেল অতিক্রম করে নাফ নদীতে ঢোকার সময় নাইক্ষ্যংদিয়ার নাফনদীর অংশে অবস্থানরত মিয়ানমারের নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে অসংখ্য গুলি ছোড়া হয়।
ট্রলারের মাঝি (সারেং) মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, কোনো ধরনের সতর্কসংকেত ছাড়াই মিয়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়া হয়। ফিশিং ট্রলার লক্ষ্য করে ১০-১৫ মিনিটে অন্তত ৫০-৬০ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। গুলি থেকে বাঁচতে ট্রলারের জেলেরা ভেতরে মাছ রাখার একটি কক্ষে আশ্রয় নেন। এরপরও দুই জেলে গুলিবিদ্ধ হন। বাংলাদেশ জলসীমানা দিয়ে বাংলাদেশি ট্রলারের ঘাটে ফেরা অবস্থায় মিয়ানমার সীমান্ত থেকে গুলি ছোড়ার ঘটনায় বাংলাদেশি জেলেদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেও কোস্টগার্ড টেকনাফ স্টেশন কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাঁর সরকারি মুঠোফোন নম্বরে কল করা হলেও রিসিভ করেননি।
তবে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওসমান গনি বলেন, বাংলাদেশি দুই জেলে গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর তিনি পেয়েছেন। গুলিবিদ্ধ দুই জেলেকে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গুলির ঘটনা অনুসন্ধান করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, টানা দুই মাস ধরে রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) লড়াই সংঘাত চলছে। কিছুদিন ধরে মংডু টাউনশিপের উত্তরের বলিবাজার, নাকফুরা, কাওয়ারবিল এবং দক্ষিণের নাইক্ষ্যংদিয়াসহ কয়েকটি এলাকাতে দুই পক্ষের সংঘাত বেড়েছে। দিন রাত মর্টার শেল, গ্রেনেড বোমার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। আরাকান আর্মির অবস্থানে আকাশ থেকে গোলা ছোড়ার পাশাপাশি নাইক্ষ্যংদিয়া, মংডুর কাছে নাফ নদীর জলসীমানায় মিয়ানমারের নৌবাহিনীর জাহাজ অবস্থান করে।