সবজিচাষি মাসুদ এখন অন্যের অনুপ্রেরণা

২০০৯ সালে ৩০ শতক জমি বর্গা নিয়ে মাসুদ রানা শুরু করেন সবজি চাষ। প্রথমবারেই লাউ চাষ করে ২০ হাজার টাকা লাভ হয়।

নিজের খেত থেকে রঙিন ফুলকপি তুলতে ব্যস্ত মাসুদ রানা। সম্প্রতি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার চড়কডাঙ্গা গ্রামেপ্রথম আলো

অভাবের কারণে মাধ্যমিকের পর আর পড়াশোনা হয়নি মাসুদ রানার। খেতখামারে শুরু করেন দিনমজুরি। কিন্তু তাতেও অভাব পিছু ছাড়ে না। একবেলা খাবার জুটলেও আরেক বেলা খাবার জুটত না। ১৫ বছর আগে মাসুদ রানার অবস্থা ছিল এমন। কিন্তু আজ তাঁর দিন বদলে গেছে। এখন তিনি একজন সফল সবজিচাষি। সবজি চাষের বদৌলতে আবাদি জমি ও পাকা বাড়ি করেছেন। গ্রামের অনেক কৃষকের পথপ্রদর্শকও হয়েছেন তিনি।

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী ইউনিয়নের চড়কডাঙ্গা গ্রামে মাসুদ রানার বাড়ি। কাঁচা-পাকা পথ ধরে তাঁর বাড়িতে যাওয়ার সময় মাঠজুড়ে চোখে পড়ে অসংখ্য সবজির খেত। বাড়ির আঙিনা, ঘরের চাল, উঠানের পাশে—সর্বত্র নানা জাতের সবজি। মাসুদ রানার বাড়িতে পৌঁছে দেখা যায় সেখানে কেউ নেই। খোঁজ করতেই একজন দেখিয়ে দেন, ‘ওই যে মাসুদ রানা ফুলকপিখেতে কাজ করছেন।’ কিছু দূর এগোতেই দেখা যায়, নিজের রঙিন ফুলকপির খেত থেকে কপি তুলছেন মাসুদ রানা। এরপর জমি থেকে আলে উঠে এসে শোনান সবজি চাষের গল্প।

মাসুদ রানা জানান, ২০০৪ সালে এসএসসি পাস করার পর অভাবের কারণে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। এরপর দিনমজুরি শুরু করেন। কিন্তু তাতেও অভাব যায় না। ২০০৯ সালে ৩০ শতক জমি বর্গা নিয়ে শুরু করেন সবজি চাষ। প্রথমবারেই লাউ চাষ করে ২০ হাজার টাকা লাভ হয়। সেই টাকায় আরও ৪০ শতক জমি বর্গা নিয়ে শুরু করেন লাউ, করলা, শিম, ফুলকপির চাষ। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এবারও তিনি দুই একরে লাউ, বেগুন, আদা, ব্রকলি, মিষ্টিকুমড়া, ফুলকপির চাষ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। এসব বিক্রি করে এখন পর্যন্ত আয় করেছেন তিন লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত খেতে যে পরিমাণ রঙিন ফুলকপি আছে, তা লাখ টাকার ওপরে বিক্রি হবে। মাসে গড় আয় ৪০ হাজার টাকা বলেও তিনি জানান

মাসুদ রানা বলেন, ‘সবজি চাষ করে পাকা বাড়ি, দুই একর আবাদি জমি কিনেছি। বরাতি বাজারে সার, কীটনাশকের দোকান করেছি, দুটি গাভিও আছে। দুই সন্তান, স্ত্রী ও মাকে নিয়ে বেশ সুখে আছি। গ্রামের মানুষ এখন আমার কাছে সবজি চাষের পরামর্শ নিতে আসেন। এবারে দুই একর জমিতে নানা ধরনের সবজি ও মসলাজাতীয় ফসলের চাষ করেছি।’

সবজি চাষে মাসুদ রানার সাফল্য গ্রামের আরও কিছু দরিদ্র মানুষের ভাগ্যবদলে সহায়ক হয়েছে। এ রকম আরেকজন কৃষক ওই গ্রামের জয়তুল ইসলাম। মাসুদ রানার কাছে পরামর্শ নিয়ে সবজি চাষ করে তিনিও নিজের সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন। কিনেছেন জমি, গড়েছেন খামার।

ওই গ্রামের হামিদুল ইসলাম বলেন, ‘মাসুদ রানা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছেন। আগে শুধু মৌসুমে ধান, পাট, তামাক চাষ করতাম। আর এখন সারা বছর সবজি চাষ করি। সবজি বিক্রির টাকা সংসার খরচ বাদেও সঞ্চয় করছি। স্ত্রী–সন্তানদের নিয়ে সুখে আছি। আমাদের গ্রামের অনেকেই মাসুদকে দেখে সবজি চাষ করে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন।’

ইকরচালী ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ওয়াজেদ আলী বলেন, মাসুদ রানার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে এলাকার কৃষকেরা সবজি চাষের দিকে ঝুঁকছেন। মাসুদ রানার সব সময় নতুন জাতের সবজি চাষের প্রতি আগ্রহ বেশি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঊর্মি তাবাসসুম বলেন, এখানকার উৎপাদিত সবজি বিভিন্ন জেলার বাজারে যাচ্ছে। এবার ইকরচালী ইউনিয়নে প্রায় দেড় শত একর জমিতে নানা ধরনের সবজি চাষ হয়েছে। চাষিদের উৎসাহিত করতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে।