ভাঙাই পড়ে থাকবে সেতুটি

সেতু পুনর্নির্মাণ না হওয়ায় আট গ্রামের মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ওই সড়ক দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

২০১৮ সালে পানির স্রোতে ভেঙে যায় জামালপুরের মেলান্দহের ঝারকাটা নদীর ওপর নির্মিত এই সেতু। গত বৃহস্পতিবার তোলা
ছবি: প্রথম আলো

২০১৮ সালে বন্যার পানির স্রোতে ভেঙে যায় জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার ঘোষের পাড়া-বেলতৈল রাস্তার ঝারকাটা নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি। সেতুটির দক্ষিণ অংশের দুটি পিলার ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে। পাঁচ বছরেও সেতুটি পুনর্নির্মাণ বা নতুন করে নির্মাণ করা হয়নি।

সেতু পুনর্নির্মাণ না হওয়ায় আট গ্রামের মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ওই সড়ক দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। নৌকা দিয়ে পারাপার হতে হয়। পণ্য পরিবহন করতে প্রায় চার কিলোমিটার পথ ঘুরতে হচ্ছে। এতে লোকজনকে অতিরিক্ত টাকাও ব্যয় করতে হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার পাঠানপাড়া গ্রামের দক্ষিণ পাশে ঝারকাটা নদীর ওপর সেতুটির দুটি স্তম্ভ ভেঙে পড়ে আছে। ভেঙে যাওয়া অংশ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তার কোনো চিহ্নও নেই। সেতুর উত্তর পাশের রেলিং ভেঙে রড চুরি হয়ে গেছে। পাঁচ বছর ধরে অচল অবস্থায় পড়ে থাকায় স্থানীয় লোকজন সেতুটির বিভিন্ন অংশ ভেঙে রড নিয়ে গেছে। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় অনেক মানুষ নৌকায় পারাপার হচ্ছে।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৮ সালের বন্যায় সেতুটি ভেঙে যায়। পাঁচ বছরেও সেতুটি পুনর্নির্মাণ করা হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের যাতায়াতের জন্য বিকল্প কোনো ব্যবস্থারও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। স্থানীয় মানুষ নিজ উদ্যোগে নৌকায় পারাপার হয়।

এই উপজেলার ঘোষের পাড়া, দক্ষিণ ঘোষের পাড়া, ছবিলাপুর, গোয়ালচর, বীরকুশের পাড়া, তাইড়াপাড়া, ডাকাতবাড়ী ও টিকদারবাড়ী গ্রামের ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ নৌকা দিয়ে পারাপার হচ্ছে। ওই সব গ্রামের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন ওই ভাঙা অংশে ঝুঁকি নিয়ে নৌকা দিয়ে পার হয়ে বেলতৈল উচ্চবিদ্যালয়, বেলতৈল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেলতৈল দাখিল মাদ্রাসা, হাজরাবাড়ী সিরাজুল হক অনার্স কলেজ ও ঝাউগড়া বঙ্গবন্ধু কলেজে যাতায়াত করতে হচ্ছে। কৃষিপণ্য বা ভারী মালামাল নিয়ে মেলান্দহ শহর ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে তাঁদের অতিরিক্ত ভাড়া ও সময় লাগছে বেশি।

ঘোষের পাড়ার কৃষক আবদুল মালেক বলেন, পাঁচ বছর আগে বন্যার সময় সেতু ভেঙে গেছে।  যাতায়াতে অনেক পথ ঘুরতে হয়। এ সেতু ভাঙা থাকায় কৃষিপণ্য বাজারে নিতে ও ছেলেমেয়েদের স্কুলে যেতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। একটা অসুস্থ রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শহরে নেওয়া খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

দক্ষিণ ঘোষের পাড়া গ্রামের বাসিন্দা রাশেদুল ইসলাম বলেন, সেতুটি ভাঙা থাকায় ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা, উপজেলা শহরসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে যাতায়াতে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। অতিরিক্ত চার কিলোমিটার পথ ঘুরে ওই সব জায়গায় যাতায়াত করতে হয়। এতে বেশি টাকাও খরচ হচ্ছে। রাস্তাঘাট পাকা হলেও শুধু ভাঙা সেতুর কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সেখানে একটি নতুন সেতু নির্মাণের দাবি তাঁর।

বেলতৈল উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. রাহাত মিয়া বলে, ‘আমরা সঠিক সময়ে স্কুলে যেতে পারছি না। অনেক ঘুরে যেতে বাড়তি ভাড়া গুনতে হয়। সঠিক সময়ে স্কুলে যেতে হলে সময়ের অনেক আগেই বাড়ি থেকে বের হতে হয়। আগে সেতুর ওপর দিয়ে স্কুলে যেতাম। এখন ঘুরে ছবিলাপুর হয়ে যেতে হয়। প্রতিদিন স্কুলে যেতে ১৫ টাকা ভাড়া লাগে।’

ঘোষের পাড়া এলাকার ব্যবসায়ী মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘সেতু ভেঙে যাওয়ায় আমাদের সমস্যার শেষ নেই। কৃষিপণ্য ও ব্যবসায়ীদের মালামাল বাজারে নিতে অনেক সমস্যা পোহাতে হয়। গাড়ি করেও বাড়ি থেকে সেতু পর্যন্ত মালামাল নিয়ে আসতে হয়। পরে শুকনা মৌসুমে মাথায় করে ভাঙা সেতুর নিচ দিয়ে অপর প্রান্তে নিয়ে তা আবার গাড়িতে তুলতে হয়। আর বর্ষার সময় নৌকায় যাতায়াত করতে হয়। এভাবে কৃষিপণ্য ও মালামাল পরিবহনে নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি খরচও বেশি হয়। আমরা এ অঞ্চলের ভাঙা সেতুটি নিয়ে বিপাকে রয়েছি। আমরা দ্রুত ভাঙা সেতুর জায়গায় একটা নতুন সেতু তৈরির দাবি জানাই।’

জামালপুরের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সায়েদুজ্জামান সাদেক বলেন, ‘সেতুটি অনেক বছর ধরেই ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে। সেতুটি এমনভাবে ভেঙেছে, সেটা কোনোভাবেই মেরামত সম্ভব ছিল না। ফলে সেখানে ২১০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি নতুন সেতু নির্মাণের ডিজাইন, সার্ভেসহ বিভিন্ন কাজ শেষ হয়েছে। এখন বরাদ্দ পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি। খুব দ্রুত বরাদ্দ পাওয়া যাবে। বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে নতুন করে সেতু নির্মাণ শুরু হবে।’