সাভারে নৌকার বিরুদ্ধে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলার অভিযোগ

সাভার পৌর এলাকার ভাগলপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থী তালুকদার তৌহিদ জং ওরফে মুরাদের অস্থায়ী নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছবি: সংগৃহীত

ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এনামুর রহমানের অনুসারী নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর অস্থায়ী নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলার অভিযোগ উঠেছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মো. তৌহিদ জং ওরফে মুরাদ এবং আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটে।

সোমবার সন্ধ্যায় নামাগেন্ডা এলাকায় সাইফুলের এবং দিবাগত রাতে সাভার পৌর এলাকার ভাগলপুরে তৌহিদ জংয়ের অস্থায়ী নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটে। নামাগেন্ডার ঘটনায় ইতিমধ্যে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।

তৌহিদ জংয়ের অনুসারী নেতা-কর্মীরা জানান, সাভার পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে তৌহিদ জংয়ের নির্বাচনী প্রচারণার লক্ষ্যে একটি অস্থায়ী কার্যালয় তৈরি করা হয়। সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে একটি নোহা ও একটি হায়েস গাড়িতে করে সাভার সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, সাভারের ছাত্রদলের সাবেক নেতা বাবু ও পলাশের নেতৃত্বে ১৫-১৬ জন ওই কার্যালয়ের সামনে আসেন। পরে তাঁরা কার্যালয়ে হামলা করে ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন এবং কয়েকটি চেয়ার ও টেবিল ভাঙচুর করেন। এ সময় তৌহিদ জংয়ের নির্বাচনী প্রচারণায় কেউ অংশ নিলে তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। পরে তাঁরা কাতলাপুরে সাভার পৌর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও তৌহিদ জংয়ের সাভার পৌরসভার ৭৩টি কেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকা আবদুল হালিমের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে হামলা করেন। এ সময় হামলাকারীরা কার্যালয়ের সাইনবোর্ড, তিনটি সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করেন।

আবদুল হালিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগেও হামলাকারীরা বিভিন্ন সময়ে আমাদের হুমকি দিয়েছিল। গতকাল ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভাগলপুরে মুরাদ জংয়ের অস্থায়ী কার্যালয়ে ভাঙচুরের পর কাতলাপুরে আমার কার্যালয়ে হামলা করে সিসিটিভি ক্যামেরা, সাইনবোর্ড ভাঙচুর করে। নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের বাধা দিতে গেলে তাঁকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে হত্যার হুমকি দেয়।’ তিনি বলেন, তাঁরা সবাই নৌকার প্রার্থী এনামুর রহমানের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হবে।

অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা মাজহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। এ ধরনের কোনো ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত নই।’
এদিকে পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের নামাগেন্ডা এলাকায় মোল্লা মার্কেটে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুল ইসলামের অস্থায়ী নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলার অভিযোগ উঠেছে নৌকার কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গতকাল রাতেই সাভার মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগকারী এ এন এম জিয়া উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যা ছয়টার দিকে আবদুল মালেক কোম্পানি, বাবু, আনু, সুমনসহ ৪০-৫০ জন আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। পরে তাঁরা কার্যালয়ে হামলা করে আমাকে বের করে দিয়ে শাটার লাগিয়ে দেন। তাঁরা সবাই এনামুর রহমান ভাইয়ের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। রাতেই এ ব্যাপারে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’

জানতে চাইলে নৌকার প্রার্থী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘হামলা কিংবা ভাঙচুর—কোনো কর্মকাণ্ডই সমর্থনযোগ্য নয়। আমার পক্ষে এ ধরনের ঘটনা প্রশ্রয় দেওয়া তো অসম্ভব। বিষয়টি সম্পর্কে আমি জানতাম না। আমার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কেউ এমনটি করবে বলে বিশ্বাস হয় না। আসলে কী ঘটেছিল কিংবা কারা জড়িত, খোঁজ নিয়ে দেখছি।’

সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) নয়ন কারকুন প্রথম আলোকে বলেন, নামাগেন্ডার ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। তবে ভাগলপুরের ঘটনায় এখনো কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এসব ঘটনায় তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনী প্রচারণার জন্য বানানো অস্থায়ী কার্যালয়ে হামলা হয়েছে, এমন কোনো অভিযোগ এখনো কেউ করেননি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।