বাগমারায় নৌকার বিরোধিতা করায় আওয়ামী লীগের ২৪ নেতাকে অব্যাহতির সুপারিশ

রাজশাহী জেলার মানচিত্র

সদ্য সমাপ্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে সরাসরি কাজ করায় সাবেক সংসদ সদস্য এনামুল হকসহ রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের ২৪ নেতাকে দলীয় পদে না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের নেতারা। মাসখানেক আগে দেওয়া কারণ দর্শানো চিঠির (শোকজ) জবাব না দেওয়ায় তাঁদের দল থেকে স্থায়ীভাবে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

অবশ্য অব্যাহতির সুপারিশ পাওয়া নেতাদের একজন উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য অনিল কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের অব্যাহতি দেওয়ার এখতিয়ার উপজেলা কমিটির নেই। এটা গণতান্ত্রিকভাবে হয়নি।

অব্যাহতির সুপারিশ পাওয়া নেতারা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এনামুল হক, সহসভাপতি আবদুল মালেক মণ্ডল, মতিউর রহমান, আফতাব উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক আল মামুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান, মকবুল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম, ক্রীড়া সম্পাদক আশিকুর রহমান, নির্বাহী কমিটির সদস্য অনিল কুমার সরকার, আজাহারুল হক, লুৎফর রহমান, জাহানারা বেগম, মমতাজ আক্তার, জাহিদুর রহমান, আয়ূব আলী, আতাউর রহমান, জাফর আহম্মেদ, আবদুল জলিল, হাসান আলী, বাসুপাড়া ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল বারিক, ঝিকড়ার আবদুল মানিক প্রামাণিক, বড় বিহানালীর রেজাউল করিম ও দ্বীপপুরের আবদুস সাত্তার। তাঁরা সাবেক সংসদ সদস্য এনামুল হকের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

গত নির্বাচনে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ। অন্যদিকে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন তিনবারের সংসদ সদস্য এনামুল হক। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। মনোনয়ন নিয়ে বর্তমান সংসদ সদস্যের সঙ্গে এনামুল হকের বিরোধ দীর্ঘদিনের। এর আগে বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদসহ তাঁর ১০ থেকে ১৫ অনুসারীকে এনামুল হকের নেতৃত্বে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। নতুন সংসদ সদস্যের আমলে একই ঘটনার শিকার হলেন এনামুল হক ও তাঁর অনুসারীরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে দলীয় কার্যালয় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর কমপ্লেক্সে উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির মাসিক সভা হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এ সভা। দলের উপজেলা শাখার সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ। সভায় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছাড়াও জেলা কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বক্তব্য দেন দলের জেলা কমিটির সহসভাপতি ইব্রাহিম হোসেন, জাকিরুল ইসলাম, শ্রম সম্পাদক মাহাবুর রহমান, উপজেলার সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন প্রমুখ।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সভায় দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে সরাসরি কাজ করায় সাবেক সংসদ সদস্য এনামুল হকসহ ২৪ জনকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তাঁদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাঁদের জবাব দিতে বলা হয়েছিল। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কেউ জবাব দেননি। এ জন্য সভায় আলোচনা করে তাঁদের চূড়ান্তভাবে অব্যাহতির সুপারিশ জেলা কমিটির কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আওয়ামী লীগের বাগমারা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারওয়ার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন, কারণ দর্শানোর চিঠির জবাবও দেননি। এ জন্য গতকালের সভায় তাঁদের স্থায়ীভাবে অব্যাহতির সুপারিশ জেলা কমিটির মাধ্যমে কেন্দ্রে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া সভায় নেতারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন তাঁদের দলীয় পদে না রাখার জন্য।