উদ্বোধনের আগেই বিদ্যালয়ের নতুন ভবনে ফাটল

দু-তিন মাস আগে কাজ শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে সামনের অংশে দুই পিলারের মাঝে বিশাল ফাটল দেখা দিয়েছে। রেলিং ভেঙে গেছে।

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে রানাহিজল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে
ছবি: সংগৃহীত

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলায় উদ্বোধনের আগেই রানাহিজল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। শিক্ষকদের অভিযোগ, ভবন নির্মাণের কাজ নিম্নমানের হয়েছে। অন্যদিকে এলজিইডির কর্মকর্তারা বলছেন, ভবনের নকশায় ভুল ছিল।

শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভবনের সামনের অংশে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। পিলারেও ফাটল আছে। ফলে ওই ভবনে ক্লাস শুরু হয়নি। নতুন একতলা ভবনে পাঁচটি কক্ষ আছে। বর্তমানে পুরোনো একটি ভবনে শিক্ষার্থীদের ক্লাস হচ্ছে। সেখানে চারটি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে ২০১৮ সালে এই বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ৭৯ লাখ টাকা চুক্তিমূল্যে কিশোরগঞ্জের ‘মেসার্স রাজিব এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। কাজের মেয়াদ ধরা হয় এক বছর। কিন্তু প্রায় পাঁচ বছরের মাথায় চলতি বছরের জুনে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। পরে জুলাইয়ে তা হস্তান্তর করা হয়। এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা।

শিক্ষকেরা বলেন, বিদ্যালয়ে মোট ১৩১ জন শিক্ষার্থী ও ৫ জন শিক্ষক রয়েছেন। প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় সহকারী শিক্ষক মেহেরুন্নেছা আক্তার ভারপ্রাপ্ত হিসেবে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, বিদ্যালয়ের জমিদাতা ও সাবেক সভাপতি মতিউর রহমানের আত্মীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক শাহ আলম মাহবুব। ফলে নিম্নমানের কাজ করলেও তাঁকে কেউ বাধা দেওয়ার সাহস পায়নি।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মেহেরুন্নেছা আক্তার বলেন, নতুন ভবনের কাজ যেনতেনভাবে করা হয়েছে। সামনের অংশে দুই পিলারের মাঝে বিশাল ফাটল দেখা দিয়েছে। যেকোনো সময় তা ভেঙে পড়তে পারে। দু-তিন মাস আগে কাজ শেষ হয়েছে। এখনো উদ্বোধন হয়নি, এর মধ্যে রেলিং ভেঙে গেছে। দেয়ালের রং উঠে গেছে। এই অবস্থায় সেখানে ক্লাস নেওয়া সম্ভব নয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর কেউ ভয়ে সেখানে যেতে রাজি নয়। তাই পুরোনো ভবনেই ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছেন। ভবনের অনিয়মের বিষয়টি এলজিইডির প্রকৌশলীসহ শিক্ষা কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।

বিদ্যালয়ের জমিদাতা মতিউর রহমান বলেন, এই কাজে ঠিকাদারের কোনো গাফিলতি ছিল না। ঠিকাদার সামনের পিলারগুলো রড দিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু এলজিইডির প্রকৌশলীই সেগুলো রডের পরিবর্তে ইট দিয়ে করতে বলেছিলেন। তাই এমনটা হয়েছে।

ঠিকাদার শাহ আলম মাহবুব বলেন, বিদ্যালয়ের পাশের রাস্তা ভালো না থাকায় মালামাল পরিবহনেও সমস্যা ছিল। নানা সমস্যার কারণে কাজ শেষ করতে দীর্ঘদিন লেগেছে। এই ভবনের নকশার পরিকল্পনায় ভুল ছিল। নকশার থেকে অনেক বেশি উঁচু করতে হয়েছে ভবনটি। সামনের পিলারগুলো নকশার চেয়ে পাঁচ ফুটের বেশি উঁচু করতে হয়েছে। নিচে পানি থাকার কারণে তা দেবে গেছে।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি আম্বিয়া আক্তারের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ভবন নির্মাণের বিষয়টি পুরোপুরি এলজিইডির হাতে। এ বিষয়ে কিছুই তাঁদের জানানো হয় না। নির্মাণ শেষে শুধু ভবন বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ফাটলের বিষয়টি তাঁরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মো. সোয়াইব ইমরান বলেন, ঠিকাদারের কাজে তেমন গাফিলতি নেই। এই ভবন নির্মাণের নকশায় ভুল ছিল। আগের প্রকৌশলীরা ওই ভুলটা করে গেছেন। নিচু জায়গায় অন্য নকশায় এটি করা দরকার ছিল। সামনের যে অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে, ওই পিলারগুলো রড আর কংক্রিট দিয়ে করলে এমনটা হতো না। এসব স্কুলের বরাদ্দ থেকে মেরামত করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ ছাড়া ঠিকাদারের জামানতের টাকা রয়ে গেছে এখনো। দ্রুত ফাটলগুলো মেরামত করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।