টানা ৬ দিন গাড়ির চাকা না ঘোরায় আয়ও হয়নি শুকুর আলীদের

গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় ওই দিন অলস সময় কাটাচ্ছিলেন খুলনার পরিবহন শ্রমিকেরা। গতকাল নগরের সোনাডাঙ্গা আন্তজেলা বাস টার্মিনালেছবি: প্রথম আলো

‘ঘরে মাছ, মাংস, চাল, ডাল কিছুই নেই। কিন্তু সে কথা কাকে বলব? গত কয়েক দিনে বাসমালিকও কোনো খোঁজ নেননি। সব মিলিয়ে কত অসহায় হয়ে আছি, তা শুধু আমিই বুঝতে পারছি।’ দেশে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কাজ বন্ধ থাকায় গতকাল মঙ্গলবার নিজের অসহায়ত্বের কথাগুলো বলছিলেন খুলনা নগরের বাসচালক মো. শুকুর আলী। তাঁর মতে, বাসের চাকা না ঘুরলে বাসচালকদের কোনো আয় নেই। তবে পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে স্বাভাবিক হতে শুরু করায় আশার কথা বলেছেন কেউ কেউ।

চারজনের সংসারে একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি শুকুর আলী। তিনি খুলনা-পাইকগাছা রুটে চলাচলকারী বাসের চালক। গত বৃহস্পতিবার থেকে ওই রুটে বাস চলাচল বন্ধ ছিল। টানা ছয় দিন গাড়ির চাকা না ঘোরায় কোনো আয় হয়নি তাঁর। তবে আজ বুধবার থেকে কারফিউ শিথিলের সময়সীমা বাড়ায় আয়ের কিছুটা সম্ভাবনা দেখছেন চালকেরা।

গতকাল সকালে খুলনা নগরের সোনাডাঙ্গা আন্তজেলা বাস টার্মিনালের এক চায়ের দোকানে বসে কথা হয় শুকুর আলীর সঙ্গে। সেখানে ছিলেন আরও কয়েকজন পরিবহনশ্রমিক। গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় ওই দিন অলস সময় কাটাচ্ছিলেন তাঁরা। শুকুর আলীর মতো এমন অসহায় হয়ে পড়েছেন খুলনার কয়েক হাজার পরিবহনশ্রমিক। টানা কয়েক দিন আয় না করতে পারায় পরিবারের খরচও মেটাতে পারছেন না। নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁরা আরও বেশি বিপাকে পড়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।

গত কয়েক দিনের দুর্ভোগের বিষয়ে পরিবহনশ্রমিকেরা বলেন, গাড়ি ছেড়ে বাড়িতে গিয়ে থাকার কোনো উপায় নেই। টার্মিনালে বাসের ভেতরে থেকে যানবাহন পাহারা দিতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে টার্মিনালেই থাকতে হচ্ছে তাঁদের।

সোনাডাঙ্গা আন্তজেলা বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ ১৮টি রুটে বাস চলাচল করে। এসব বাসে প্রায় ১২ হাজার কার্ডধারী পরিবহনশ্রমিক আছেন। আর কার্ড ছাড়া শ্রমিকের সংখ্যা ১০ হাজারের মতো। এর বাইরে পরিবহনসংশ্লিষ্ট মেকানিক, গ্যারেজ ও অন্যান্য খাত মিলে শ্রমিক আছেন আরও প্রায় পাঁচ হাজার।

শ্রমিকনেতারা বলেন, সোনাডাঙ্গা আন্তজেলা বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ ১৮টি রুটে বাস চলাচল করে। এসব বাসে প্রায় ১২ হাজার কার্ডধারী পরিবহনশ্রমিক আছেন। আর কার্ড ছাড়া শ্রমিকের সংখ্যা ১০ হাজারের মতো। এর বাইরে পরিবহনসংশ্লিষ্ট মেকানিক, গ্যারেজ ও অন্যান্য খাত মিলে শ্রমিক আছেন আরও প্রায় পাঁচ হাজার। অনেক পরিবহনশ্রমিক খুলনায় আটকা পড়েছেন। সব মিলিয়ে গত কয়েক দিনে দুর্বিষহ জীবন কাটছে পরিবহনশ্রমিকদের।

মো. আকাশ নামের একজন পরিবহনশ্রমিক বলেন, ‘আমরা কোনো সাহায্য চাই না। গাড়ি চলাচল করলেই আমাদের আর্থিক সমস্যা অনেকটা মিটে যাবে।’

খুলনা-ঢাকা রুটের রাজীব পরিবহনের সহকারী মো. মামুন বলেন, ‘গাড়ির চাকা ঘুরলেই আমরা টাকা পাই। করোনার সময় গাড়ি চালানো বন্ধ থাকলেও সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্য করা হয়েছিল, কিন্তু এখন তা–ও পাচ্ছি না।’

টার্মিনালের এক পাশে ছোট্ট একটি চায়ের দোকানে বসেন জামিলা বেগম। তাঁর প্রধান ক্রেতা পরিবহনশ্রমিকেরাই। জামিলা বেগম বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে বাকিতে চা-বিস্কুট খাচ্ছেন শ্রমিকেরা। বাকি দিতে দিতে আমার নগদ টাকাও শেষ হয়ে গেছে। এখন দোকানে মাল তোলার জন্য শ্রমিকদের কাছে টাকা চেয়েও পাচ্ছি না। গাড়ি না চলায় আমরাও খুব সমস্যার মধ্যে আছি।’