চাল–গম বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে মজুরি

প্রতিদিন ৪৫০ টাকা করে মজুরি দেওয়া হয়। প্রায় একই পরিমাণ টাকা প্রকল্পের চেয়ারম্যানের পকেটে যাচ্ছে।

রংপুরের তারাগঞ্জে কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচি বাস্তবায়নে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। মজুরি হিসেবে শ্রমিকদের চাল বা গম দেওয়া কথা। তবে প্রকল্পের চেয়ারম্যানরা বরাদ্দ পাওয়া চাল ও গম বিক্রি করে টাকায় মজুরি দিচ্ছেন। এতে তাঁরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শ্রমিকেরা।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় (পিআইও) সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কর্মসূচির আওতায় সেপ্টেম্বর মাসে সাধারণ ও বিশেষ মিলে উপজেলায় মোট ৪৬ দশমিক ৮২৯ মেট্রিক টন চাল ও ৪৬ দশমিক ৮২৯ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ এসেছে। ওই বরাদ্দে বিপরীতে ১৬টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের শর্ত হিসেবে প্রতি ঘনমিটার মাটি কাটার জন্য শ্রমিকদের ৩ কেজি ৭৩৩ গ্রাম করে চাল অথবা ৫ কেজি ২৩০ গ্রাম গম দিতে হবে। কোনো অবস্থাতেই চাল ও গম বিক্রি করে টাকায় শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ করা যাবে না। প্রতিটি প্রকল্পে সাইনবোর্ড টাঙাতে হবে। কিন্তু কোনো প্রকল্প চেয়ারম্যান এ নিয়ম মানছেন না। তাঁরা চাল ও গম বিক্রি করে শ্রমিকদের টাকা দিচ্ছেন।

পিআইওর কার্যালয় থেকে আরও জানা গেছে, জগদীশপুর বিশ্বরোড থেকে ভাদুরবাড়ি রাস্তা সংস্কারের জন্য ৪ দশমিক ৩২৯ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত শনিবার গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে আবদুল মজিদ, নুরুল ইসলাম, এমদাদুল হকসহ ৬ জন শ্রমিক মাটি কাটছেন। জানতে চাইলে তাঁরা জানান, রাস্তায় মাটি কাটার মজুরি হিসেবে তাঁদের টাকা দেওয়া হচ্ছে। চাল বা গম তাঁরা কখনো পাননি। এ বিষয়ে কোনো কিছু জানেনও না।

এ প্রকল্পের চেয়ারম্যান ইউপি সদস্য ফাত্তাজুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ‘চাল বিক্রি করছি, তাতে সমস্যা কী? শ্রমিকদের তো টাকা দিচ্ছি। ফ্রিতে তো মাটি কাটি নিচ্ছি না।’

একই ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে, সয়ার চেংপাড়ার মোকছেদুলের বাড়ি থেকে নোভেলের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার প্রকল্পের শ্রমিকদের কাছ থেকে। এই প্রকল্পের বিপরীতে ৩ দশমিক ৫০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

ওই প্রকল্পের চেয়ারম্যান আফজালুল হক বলেন, ‘ভাই আমাকে জোর করে প্রকল্প চেয়ারম্যান বানানো হয়েছে। যিনি প্রকল্পের চেয়ারম্যান বানিয়েছেন, তিনিই প্রথম কিস্তির চাল বিক্রি করেছেন। তাই টাকায় শ্রমিকদের কাজ করানো হচ্ছে।’

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুজন শ্রমিক বলেন, তাঁরা একেকজন প্রতিদিন ৫-৬ ঘনমিটার মাটি কাটেন। এই হিসাবে তাঁরা ২৬-৩১ কেজি গম পাবেন, যা বিক্রি করে দৈনিক মজুরি হবে ৯০০-১০০ টাকা। কিন্তু তাঁদের প্রতিদিন ৪৫০ টাকা করে মজুরি দেওয়া হয়। অর্ধেকের বেশি টাকা প্রকল্প চেয়ারম্যানের পকেটে যাচ্ছে।

রোস্তমের বাগান থেকে চিলবিল যাওয়ার রাস্তাটি সংস্কার জন্য ৪ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হলেও শ্রমিকদের টাকা দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। ওই প্রকল্পের চেয়ারম্যান মোরশেদা খাতুন বলেন, ‘আমি কেন, কোনো প্রকল্পের চেয়ারম্যান শ্রমিকদের চাল-গম দেন না, এটা সবাই জানেন।’

আলমপুর ইউনিয়নের পশ্চিম শেরমস্ত সরকারপাড়া ঈদগাহ মাঠে মাটি ভরাটকরণ প্রকল্পে ১০ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই প্রকল্পে শ্রমিকদের পরিবর্তে ট্রলি দিয়ে মাটি ভরাট করা হচ্ছে। ওই প্রকল্প চেয়ারম্যান এনামুল হক বলেন, প্রকল্পের আশপাশে তো মাটি কাটার মতো জায়গা নেই। তাই ট্রলিতে করে দূর থেকে মাটি এনে মাঠ ভরাট করা হচ্ছে।?

পিআইও আলতাফ হোসেন বলেন, প্রকল্প চেয়ারম্যানদের শ্রমিকদের মধ্যে চাল ও গম বিতরণের নির্দেশ দেওয়া আছে। চাল-গমের পরিবর্তে টাকা দিলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।