উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থীরা কারও (সংসদ সদস্যদের) আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে সুবিধা নিলে দয়া করে সরে আসেন। এ রকম অবস্থা যদি দাঁড়ায়, যদি অভিযোগ আসে, তাহলে প্রার্থিতা বাতিল হতে পারে।
আজ শনিবার সকালে রাজশাহীতে উপজেলা নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) রাশেদা সুলতানা।
রাজশাহী বিভাগীয় প্রশাসন জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। রাশেদা সুলতানা বলেন, উপজেলা নির্বাচন হবে প্রভাবমুক্ত। প্রভাবশালীরা এই নির্বাচনে প্রভাব খাটালে কমিশন প্রয়োজনে তাঁদের বিরুদ্ধে বিধিবিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ইসি রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘আপনারা দয়া করে আপনাদের জায়গায় থাকেন। আপনার মানইজ্জত, মর্যাদা আপনি রক্ষা করবেন।’
রাশেদা সুলতানা জানান, নির্বাচন আইনি কাঠামোর মধ্যেই হয়ে থাকে। নির্বাচনের প্রতিটি ধাপে আইনের একচুল নড়চড় হবে না। আইনের মধ্যে থেকেই পা ফেলতে হবে। কেউই এর বাইরে যেতে পারবে না। সব প্রার্থীকে সমান চোখে দেখতে নির্বাচন–সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান এই ইসি।। যে হাঙ্গামা করবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পিছপা না হওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।
প্রার্থীদের উদ্দেশে রাশেদা বলেন, ‘ভোটের দিন আপনারা ভোটকেন্দ্র দখলের মতো কোনো দুঃসাহস দেখাবেন না। ব্যালট পেপার সিল মেরে ঢুকাবেন—এটা করবেন না। আমাদের কাছে তথ্য গেলে আমরা সেই ভোট যেকোনো মুহূর্তে বাতিল করে দেব। আচরণবিধি ভঙ্গ করলে নির্বাচনের মুহূর্তেও আমরা আপনাদের প্রার্থিতা বাতিল করব। এরপরও যদি ফলাফল প্রকাশ হয়ে যায়, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে সেই ফলাফল গেজেটে প্রকাশ করব না। নির্বাচনটাই আমরা বাতিল করে দেব।’
ভোটারদের অংশগ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরে নির্বাচন কমিশনের রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত এই কমকর্তা বলেন, ‘ভোটারবিহীন নির্বাচনে কোনো সৌন্দর্য নেই, গ্রহণযোগ্যতা নেই, এমনকি আনন্দও নেই। ১০ শতাংশ ভোট পেয়ে জেতা আর ৮০ শতাংশ ভোট পেয়ে জেতার মধ্যে তফাত আছে। এমন অবস্থায় প্রার্থীরাই চিন্তা করবেন, আপনারা কি ১০ শতাংশ ভোটার নিয়ে জিততে চান, নাকি ৮০ শতাংশ নিয়ে।’
নির্বাচন–সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্যে রাশেদা সুলতানা বলেন, নির্বাচন কমিশনের চাওয়া বেশি–সংখ্যক ভোটার আসুক এবং ভোট উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হোক। নির্বাচন কমিশনের এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই, কোন প্রার্থী জিতবে বা হারবে। কমিশনের একটাই নির্দেশনা সব প্রার্থীকে সমানভাবে দেখবেন এবং যে হাঙ্গামা করবে, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এই নির্দেশনা যিনি প্রতিপালন করবেন না, তিনি তার দায় বহন করবেন। কমিশন অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবে।
রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনিসুর রহমান, আরএমপি কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেনসহ আইনশৃঙ্খলা ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।