কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে বিএনপির ১৪ নেতা–কর্মী

২১ মে মহানগর বিএনপি সংবাদ সম্মেলন করে আজীবন বহিষ্কারের হুমকি দেয়। কিন্তু ওই হুমকি উপেক্ষা করে ১৪ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন।

রাজশাহী জেলার মানচিত্র

আজীবন বহিষ্কারের ঘোষণা উপেক্ষা করে বিএনপির ১৪ নেতা–কর্মী রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাধারণ ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে তাঁদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তবে তাঁদের বেশির ভাগই দলের সাবেক নেতা। কেউ কেউ বলেছেন, যাঁরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তাঁরা দল করা ছেড়ে দিয়েছেন।

অথচ ২১ মে বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার জন্য কড়াভাবে সতর্ক করে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। ওই সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছিল, কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে তাঁকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে। তাঁরা বিশ্বাসঘাতক ও জাতীয় বেইমান হিসেবে দলের কাছে চিহ্নিত থাকবেন। জনগণের সামনে তাঁদের জবাবদিহি করতে হবে।

এটা দলীয় নির্বাচন নয়। এই নির্বাচন করতে কোনো সাংগঠনিক বাধা থাকার কথা নয়। জনগণ আমাকে চাচ্ছে।
আনোয়ারুল আমিন, সাবেক সহসভাপতি, মহানগর বিএনপি

রাজশাহী মহানগর বিএনপি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, কেন্দ্রীয় কমিটির বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সম্পাদক শফিকুল, রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ উপস্থিত ছিলেন। 

গত মঙ্গলবার (মনোনয়নপত্র দাখিলের পর খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৩ জন বিএনপি নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে চলতি মেয়াদের পাঁচজন সাধারণ কাউন্সিলর ও দুই সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রয়েছেন। 

বিএনপি ও তাদের সহযোগী সংগঠনের যেসব নেতা, কর্মী ও সমর্থক সাধারণ কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন, তাঁরা হলেন নগরের ৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ওই ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলে কবীর, ৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে রাজপাড়া থানা বিএনপির সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান, ১১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বোয়ালিয়া থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু বাক্কার, ১৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে মহানগর যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মো. টুটুল, ১৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সাবেক যুবদল নেতা আবদুস সোবাহান, ১৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে শাহ্ মখদুম থানার যুবদলের সাবেক সভাপতি  বর্তমান কাউন্সিলর বেলাল আহম্মেদ, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে রাজশাহী মহানগর যুবদলের সাবেক নির্বাহী সদস্য শহিদুল ইসলাম, ১৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে মহানগর যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নূরুজ্জামান, ২৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি বর্তমান কাউন্সিলর আনোয়ারুল আমিন, ২৮ নম্বর নম্বর ওয়ার্ড থেকে বর্তমান কাউন্সিলর সাবেক ছাত্রদল নেতা আশরাফুল হাসান এবং ২৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নগর যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাইদুর রহমান।

নির্বাচন করার জন্য দেড় মাস আগে পদত্যাগ করেছেন। জনগণ আমাকে চাইছে। তাই আমি নির্বাচন করছি।
মুসলিমা বেগম, সাংগঠনিক সম্পাদক, নগর মহিলা দল

সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের প্রার্থীদের মধ্যে ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে রাজশাহী মহানগর মহিলা দলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বর্তমান কাউন্সিলর শাহানাজ বেগম, ৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে মহানগর মহিলা দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বর্তমান কাউন্সিলর শামসুন্নাহার ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নগর মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক বর্তমান কাউন্সিলর মুসলিমা বেগম মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

বিএনপির বহিষ্কারের ঘোষণার পরও নির্বাচন করার ব্যাপারে কথা হয় বর্তমান কাউন্সিলর রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি বর্তমান কাউন্সিলর আনোয়ারুল আমিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের কোনো দলীয় প্রতীক ব্যবহার করা হয় না। এটা দলীয় নির্বাচন নয়। এই নির্বাচন করতে কোনো সাংগঠনিক বাধা থাকার কথা নয়। আমি চারবার নির্বাচিত হয়েছি। দীর্ঘদিন মাঠ ধরে রেখেছি। জনগণ আমাকে চাচ্ছে। তাই আমি মাঠ ছাড়ব না। নির্বাচন করব।’ 

এ বিষয়ে সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মুসলিমা বেগম বলেন, ‘নির্বাচন করার জন্য দেড় মাস আগে আমি পদত্যাগ করেছি। জনগণ আমাকে চাইছে। তাই আমি নির্বাচন করব।’ শাহ মখদুম থানা যুবদলের সাবেক সভাপতি ও টানা চারবারের কাউন্সিলর বেলাল আহাম্মেদ বলেন, অনেক দিন আগে তাঁর পদ ছিল। এখন নেই। তিনি আর কোনো দল করেন না। 

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন পর্যন্ত মেয়র পদে ৪ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১২৪ জন এবং সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের প্রার্থী হতে ৪৬ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে আজ ২৫ মে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১ জুন। এরপর ২ জুন প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। প্রতীক বরাদ্দের পরই শুরু হবে প্রচার। ২১ জুন ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে।