সেন্ট মার্টিনে আটকে পড়া পর্যটকেরা খাচ্ছেন ডাল-ভাত

সেন্টমার্টিনে আটকে পড়া পর্যটকেরা রেস্তোরাঁয় পছন্দসই খাবার পাচ্ছেন না। ডাল–ভাত খেয়েই থাকতে হচ্ছে তাঁদের। আজ বৃহস্পতিবার সকালে সেন্ট মাটিন বাজারের একটি রেস্তোরাঁয়
ছবি সংগৃহীত

ঢাকা থেকে চার সদস্যের পরিবার নিয়ে ২ অক্টোবর কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিন বেড়াতে আসেন জাহিদুর রহমান। পরদিন ৩ অক্টোবর ফেরার কথা থাকলেও ফিরতে পারেননি। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের কারণে জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আটকে পড়েন তিনি। হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাবারও মিলছে না। ডাল-ভাত আর আলুভর্তা খেয়েই থাকতে হচ্ছে জাহিদুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের।

সেন্ট মার্টিনে বেড়াতে এসে জাহিদুর রহমানের মতো আটকা পড়া সাড়ে তিন শ পর্যটক এখন হোটেল রেস্তোরাঁয় পছন্দসই খাবার পাচ্ছেন না। দ্বীপে নিত্যপণ্যের সংকটের কারণে ডাল-ভাত খেয়ে থাকতে হচ্ছে তাঁদের।

গভীর নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ায় গত মঙ্গলবার বিকেলে কক্সবাজার উপকূলে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত জারি করে আবহাওয়ার অধিদপ্তর। আজ বৃহস্পতিবারও তা বলবৎ রয়েছে।

সেন্ট মার্টিন পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. সেলিম হোসেন বলেন, আবহাওয়ার অধিদপ্তরের জারি করা সতর্কসংকেত আজ দুপুর পর্যন্ত বলবৎ থাকায় পর্যটকবাহী জাহাজ টেকনাফ থেকে ছেড়ে আসেনি। ফলে সেন্ট মার্টিনে আটকে পড়া পর্যটকদের আজও দ্বীপে অবস্থান করতে হবে।

ঢাকা থেকে আসা পর্যটক জাহিদুর রহমান বলেন, গত রাতে বাজারের একটি হোটেলে ডাল, আলুভর্তা দিয়ে ভাত খেয়েছি। এমন খাবার শিশুরা খেতে চাইছে না। সব মিলিয়ে পর্যটকেরা বড় ভোগান্তিতে পড়েছেন।

কখন জাহাজ আসবে, সে অপেক্ষায় সময় কাটছে পর্যটকদের। আজ সকালে সেন্ট মার্টিন বাজারে
ছবি সংগৃহীত

জানা গেছে, ২৭ অক্টোবর বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে চলতি মৌসুমে প্রথম এমভি বারো আউলিয়া জাহাজকে পর্যটক পরিবহনের অনুমতি দেওয়া হয়। আটকে পড়া পর্যটকেরা ওই জাহাজে চড়ে সেন্ট মার্টিনে এসেছেন।

এদিকে, টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে গত ২৭ সেপ্টেম্বর একটি স্পিডবোট উল্টে একজন সাবেক নারী ইউপি সদস্য মারা যাওয়ায় কোস্টগার্ড এই নৌপথে সার্ভিস ট্রলার চলাচল বন্ধ করে দেয়। এরপর ছয় দিন ধরে টেকনাফ থেকে কোনো ধরনের পণ্যবাহী ট্রলার সেন্ট মার্টিনে আসেনি। এ জন্য শাকসবজি, তরিতরকারি এবং নিত্যপণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে দ্বীপে।

সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, দ্বীপে তরিতরকারি, ডিম, ব্রয়লার মুরগি নেই। কিছু দোকানে আলু, চাল ও ডাল রয়েছে। সাগর উত্তাল থাকায় মাছ ধরাও বন্ধ রয়েছে। দ্বীপের সাড়ে ১০ হাজার বাসিন্দা, হোটেল-রিসোর্টগুলোর কর্মচারীসহ প্রায় ১২ হাজারের মতো লোক রয়েছেন। তারাও নিত্যপণ্যের সংকটের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি জানার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। দ্বীপের বাসিন্দা ও পর্যটকদের কথা বিবেচনা করে নিত্য পণ্য সামগ্রিক নিয়ে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশ্যে সার্ভিস ট্রলারে করে মালামাল পরিবহনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে কোনো ধরনের পর্যটক পরিবহন করা যাবে না বলে নির্দেশনা ও দেওয়া হয়।

তিনটি ট্রলারে যাচ্ছে নিত্যপণ্য
আজ সকাল আটটা থেকে টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালীয়া খালের ঘাট থেকে এসবি ফারুক, এসবি নাঈম ও এসবি ফাহিম নামে তিনটি ট্রলারে শ্রমিকেরা চাল, ডাল, ডিম, ব্রয়লার মুরগি, আলু, পেঁয়াজ, তেল, তরকারি, বিস্কুটসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্য সামগ্রিক ট্রলারগুলোতে ভর্তি করছেন। আবহাওয়া ভালো থাকলে ট্রলারগুলো আজই সেন্ট মার্টিনে যাবে। নিত্যপণ্যবাহী ট্রলার পৌঁছালে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে খাবারের সমস্যা থাকবে না।