কোরবানির মাংসের আখনি নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে তরুণেরা

সুনামগঞ্জে বন্যার্তদের মধ্যে কোরবানির গরুর মাংস দিয়ে তৈরি করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে শহরের হাছননগর এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জ পৌর শহরে প্রতিবছর ঈদের দিন কোরবানির মাংস দিয়ে হতদরিদ্রদের এক বেলা পেট ভরে খাওয়ানোর উদ্যোগ নেয় একদল তরুণ। তাঁরা নিজেরা যেমন অর্থ দেন, তেমনি অর্থ দিয়ে পাশে থাকেন দেশে-বিদেশে থাকা তাঁদের স্বজন ও সুহৃদেরা।

কিন্তু এবার ঈদের দিন সোমবার প্রবল বর্ষণ ও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে অনেকে পশু কোরবানি দিতে পারেননি। পরদিন মঙ্গলবার সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। অনেক মানুষ শহরের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেয়।

এ অবস্থায় ওই তরুণেরা দুটি পশু কোরবানি দিয়ে সেই মাংস দিয়ে আখনি তৈরি করে হাজির হন আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ও রাতে শহরের বিভিন্ন মোড় ও আশ্রয়কেন্দ্রে বন্যার্ত মানুষের মধ্যে এই খাবার বিতরণ করেন তাঁরা। তরুণদের দেওয়া খাবারে উপকৃত হয় বন্যার্ত মানুষ।

এই তরুণেরা শুধু যে এই বন্যায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, এমন নয়, তাঁরা করোনা, বন্যা, বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবে সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি যেকোনো সংকটে মানুষের পাশে দাঁড়ান। পাঁচ বছর ধরে পবিত্র রমজানে প্রতিদিন প্রায় ২০০ দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষের জন্য ইফতারের আয়োজন করেন। এর জন্য নিজেরা যেমন অর্থ দেন, তেমনি তাঁদের সব মহতি উদ্যোগে অর্থ দিয়ে পাশে থাকেন দেশে-বিদেশের অনেকে। গত বছরের আগস্টে বান্দরবান জেলায় বন্যাদুর্গতদের জন্য সুনামগঞ্জ থেকে সহায়তা নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। একটি সংগঠনও রয়েছে তাঁদের, নাম ‘সোশ্যাল চ্যারিটি ফাউন্ডেশন’।

আরও পড়ুন
কোরবানির গরুর মাংস দিয়ে আখনি তৈরি করা হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সুনামগঞ্জ শহরের হাছননগর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

সংগঠনটির পুরো কাজ সমন্বয় করেন নাসিম চৌধুরী। বলা যায় তিনিই দলনেতা।
নাসিম চৌধুরী জানান, তাঁরা প্রতিবছর ঈদুল আজহায় গরু কোরবানি দিয়ে শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে হতদরিদ্র মানুষের এক বেলা খাবারের আয়োজন করেন। কিন্তু এবার ঈদের দিন সুনামগঞ্জে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। গতকাল বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। অনেকেই বাড়িঘর থেকে দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রে আসে। এর মধ্যে শিশুরাও আছে। তাই তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, যত দ্রুত সম্ভব, গরুগুলো কোরবানি দিয়ে মাংস রান্না করে এসব মানুষের কাছে খবার নিয়ে যাবেন। সে অনুযায়ী কাজ শুরু করেন তাঁরা। বাবুর্চি ডেকে আনা হয়। সকাল থেকে শুরু হয় রান্না।

বিকেলে শহরের ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এইচএমপি উচ্চবিদ্যালয়, সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র এবং বড়পাড়া ও হাসননগর এলাকায় এ খাবার বিতরণ করেন তাঁরা। রাতে খাবার বিতরণ করা হয় সরকারি কলেজ, নার্সিং ইনস্টিটিউট ও আইএইচটিআই আশ্রয়কেন্দ্র এবং মোহাম্মদপুর এলাকায়।

বন্যার্তদের মধ্যে এই খাবার বিতরণে সংগঠনের তরুণ স্বেচ্ছাসেবী মাহফুজুর রহমান, আদিব সারজিন, সাইফুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম, আকমল হোসেন, ইফতেখার সাজ্জাদ, মাহফুজ সিয়াম, মাহবুব হাসানসহ আরও কয়েকজন সহযোগিতা করেন। এই তরুণদের অনেকেই শিক্ষার্থী, আবার কেউ কেউ ব্যবসা করেন।

আরও পড়ুন

নাসিম চৌধুরী জানান, গতকাল বিকেলে ও রাতে তাঁরা প্রায় তিন হাজার মানুষকে খাবার দিয়েছেন। এই খাবার বিতরণ চালিয়ে যাবেন তাঁরা।

সুনামগঞ্জ সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সদস্য আইনজীবী আইনুল ইসলাম বলেন, তরুণদের তাৎক্ষণিক এই উদ্যোগ চোখে পড়েছে। এটি প্রশংসনীয়। সবার উচিত বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানো।