মামলা হয়েছে, জেলও খেটেছেন, তবু পেয়েছেন পদোন্নতি

জয়পুরহাট জেলার মানচিত্র

জয়পুরহাটের একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তার পদে থাকাবস্থায় মেডিকেল পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ঢাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তিনি গ্রেপ্তার হন। চার সপ্তাহের অধিক সময় কারাগারেও ছিলেন। মেডিকেলের প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জড়িত থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও হয়।

জামিনে বের হয়ে ঢাকার আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছিলেন। তবে এসব ঘটনার সবকিছু সুকৌশলে গোপন রেখেছিলেন তিনি। এ কারণে বরখাস্ত হওয়ার বদলে উল্টো পদোন্নতিও পেয়েছিলেন। এখনো বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন। অবশেষে এসব ঘটনা জানাজানি হয়েছে।

ওই ব্যক্তি হলেন জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সোলায়মান হোসেন (মেহেদী)। প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর কর্মস্থল থেকে তাঁকে অন্যত্র বদলি করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ১১ জানুয়ারি পাঁচবিবি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তাঁকে কুষ্টিয়া ম্যাটসে বদলি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জয়পুরহাটের সিভিল সার্জন আকুল উদ্দিন। তবে এখনো বদলি হওয়া কর্মস্থলে যোগদান করেননি সোলায়মান হোসেন।

সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী, কোনো সরকারি কর্মকর্তা ফৌজদারি মামলায় প্রেপ্তার, কারাবন্দী বা চার্জশিটভুক্ত হলে নির্দোষ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত বরখাস্ত থাকবেন। পাঁচবিবি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সোলায়মান হোসেনকে সরকারি চাকরিবিধি স্পর্শ করতে পারেনি। বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ সালে ৩৩তম বিসিএসে নিয়োগ পান সোলায়মান হোসেন। তিনি ২০১৭ সালে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা কর্মকর্তা (মেডিকেল অফিসার) পদে কর্মরত ছিলেন। মেডিকেলের প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে ২০১৭ সালের ৮ অক্টোবর রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। কয়েক সপ্তাহ তিনি কারাগারে ছিলেন। ২০২০ সালে সেই মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় কারাগারে থাকার কথা গোপন রেখে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন বলে চালিয়ে দেন সোলায়মান।

ডান হাঁটুতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন বলে ২০১৮ সালের ৫ মার্চ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহকারী মো. আবদুল মান্নান সোলায়মানের জন্য ২০১৭ সালের ৩ অক্টোবর থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত ৪৩ দিনের ছুটি মঞ্জুর করে প্রজ্ঞাপন জারি করেন। এরপর তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি পেয়ে পাঁচবিবি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দেন। প্রশিক্ষণসহ নানা কারণ দেখিয়ে তিনি ধার্য তারিখে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলায় আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছিলেন। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সোলায়মানকে নিয়ে সংবাদ প্রচারিত হয়। এরপর রাজশাহী স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর থেকে একটি তদন্ত দল ১০ জানুয়ারি ঘটনাটি তদন্তে আসে। এর মধ্যে ১১ জানুয়ারি পাঁচবিবি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে কুষ্টিয়ার ম্যাটসে বদলি করা হয়।

বিষয়টি জানতে চেয়ে আজ রোববার বিকেলে সোলায়মান হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। এ কারণে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে জয়পুরহাট সিভিল সার্জন মো. আকুল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাঁচবিবি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সোলায়মান হোসেনকে কুষ্টিয়া ম্যাটসে বদলি করা হয়েছে। মেডিকেলের প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সঙ্গে তাঁর জড়িত থাকার বিষয়টি শুনেছি। এ বিষয়ে ১০ জানুয়ারি রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় থেকে একটি তদন্ত হয়েছে।’