নাসিরনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ বছর পর সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার শুরু

নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ বছর পর সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এক নবজাতক জন্ম নিয়েছে। আজ দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সংকট ছিল অবেদনবিদের (অ্যানেসথেটিস্ট)। এতে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার। হাওরবেষ্টিত উপজেলার অন্তঃসত্ত্বা নারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। প্রায় এক যুগ পর আজ বৃহস্পতিবার চালু হয়েছে এই অস্ত্রোপচার। দুপুরে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নবজাতকের জন্ম দিয়েছেন এক নারী।

যদিও এই অস্ত্রোপচারে জটিলতা দেখা দেয়। জরুরি ভিত্তিতে ওই নারীর রক্তের প্রয়োজন হয়। পরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভান্ডাররক্ষক এগিয়ে আসেন। তিনি রক্ত দেন ওই মাকে, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তিনি।

ওই নারীর নাম দিলারা বেগম (২২)। তিনি উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের আব্বাস মিয়ার স্ত্রী। মা ও সন্তান উভয় সুস্থ আছেন। ভূমিষ্ঠ হওয়া সন্তানের ওজন তিন কেজি।

নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অভিজিৎ রায় প্রথম আলোকে বলেন, ১২ বছর পর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার হয়েছে। কাজটি জটিল ছিল। কারণ, অন্তঃসত্ত্বার গর্ভের সন্তানের অবস্থান উল্টো ছিল। অস্ত্রোপচার শুরুর পর জরুরি ভিত্তিতে তাঁর বি–পজিটিভ রক্তের প্রয়োজন দেখা দেয়। পরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভান্ডাররক্ষক (স্টোরকিপার) জামাল মিয়া রক্ত দেন। মা ও সন্তান ভালো আছেন। তাঁদের কোনো খরচও লাগবে না।

স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অভিজিৎ রায়ের সার্বিক সহযোগিতায় তাঁর অস্ত্রোপচার করেন জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি ও অবস্টেট্রিকস) নাফিছা জাফরিন।

অভিজিৎ রায় বলেন, ‘এখন থেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছোটখাটো অস্ত্রোপচারও হবে। কাজটি শুরু করতে পারায় আমরা আনন্দিত। এখন উপজেলার অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের সন্তান প্রসবের কষ্ট অনেকটা লাগব হবে।’

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালে নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কোটি টাকা ব্যয়ে চারতলাবিশিষ্ট নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার চালুর জন্য কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক সব যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়। কিন্তু প্রায় ১২ বছর ধরে চিকিৎসক সংকটের কারণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অস্ত্রোপচার চালু করা সম্ভব হয়নি। হাওরবেষ্টিত এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এত দিন কোনো অবেদনবিদ যোগদান করেননি। এতে সন্তান প্রসবের সেবা থেকে বঞ্চিত ছিল উপজেলার প্রায় চার লাখ মানুষ।

চিকিৎসক ও অন্তঃসত্ত্বার পরিবার সূত্র জানায়, আজ সকালে অন্তঃসত্ত্বা দিলারা বেগমকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন পরিবারের লোকজন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাঁর প্রসবব্যথা ওঠে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অভিজিৎ রায়ের সার্বিক সহযোগিতায় তাঁর অস্ত্রোপচার করেন জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি ও অবস্টেট্রিকস) নাফিছা জাফরিন। তাঁকে অ্যানেসথেসিয়া দেন অবেদনবিদ ফৌজিয়া আখতার। চিকিৎসক ইমরানা মুন্নী ও সিনিয়র স্টাফ নার্স (ইনচার্জ) নয়ন মনি সহায়তা করেন। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দিলারা একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন।

নবজাতকের বাবা মো. আব্বাস মিয়া জানান, চাপড়তলা ইউনিয়ন থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার রাস্তা পার হয়ে তাঁরা নাসিরনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়েছেন। তিনি আর্থিকভাবে অসচ্ছল। তিনি কৃষিকাজ কাজ করে সংসার চালান। তিনি বলেন, ‘ইউনিয়নের একজন স্বাস্থ্য সহকারী জানাইছেন যে হাসপাতালে বিনা মূল্যে বাচ্চা প্রসব করানো হয়। তাই বউরে লইয়্যা হাসপাতালে আইছি। দুপুরে সিজার করছে। সব ওষুধ হাসপাতাল থেইক্যাই দিছে। রক্তও হেরাই ম্যানেজ কইরা দিছে। যে রক্ত দিছেন, তিনি হাসপাতালেই কাজ করেন।’