নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল, বিলীন হচ্ছে স্থাপনা, ঝাউগাছ ও বেড়িবাঁধ

উত্তাল সাগরের ঢেউ সৈকতে আছড়ে পড়ছে। ঝুঁকির মুখে ট্যুরিস্ট পুলিশের একটি হেল্পডেস্ক। বৃহস্পতিবার দুপুরে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে
ছবি: প্রথম আলো

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূল প্রচণ্ড উত্তাল রয়েছে। স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ থেকে ছয় ফুট উঁচু ঢেউ উপকূলে আছড়ে পড়ছে। এতে বিলীন হচ্ছে সৈকতের বালুচরে স্থাপিত ট্যুরিস্ট পুলিশের তথ্যকেন্দ্র (হেল্পডেক্স), প্রতিরক্ষা বেড়িবাঁধসহ বিপুল ঝাউগাছ। ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে ক্ষয়ক্ষতি আরও বাড়তে পারে।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কক্সবাজারে থেমে থেমে হালকা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তবে বৈরী আবহাওয়ায় সাগর প্রচণ্ড উত্তাল। বিশেষ করে জোয়ারের সময় সমুদ্রের পানি বালুচর ডুবে ওপরের দিকে চলে আসছে।

এদিকে এমন অস্থিতিশীল ও বৈরী পরিবেশেও ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল সমুদ্রে গোসলে নামছেন শত শত পর্যটক। উত্তাল সাগরে গোসলে নামতে নিষেধ করে সৈকতে একাধিক লাল নিশানা (পতাকা) উড়ানো হচ্ছে। প্রচার চালাচ্ছেন ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্য ও বেসরকারি লাইফগার্ড প্রতিষ্ঠান সি সেফের কর্মীরা। কিন্তু সেদিকে কারও নজর নেই।

আজ সকাল সাতটা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত সৈকতের কলাতলী, সুগন্ধা, সিগাল ও লাবণী পয়েন্টের চার কিলোমিটারে নেমেছেন অন্তত ১২ হাজার মানুষ। বেশির ভাগই ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল সাগরে গোসল করছেন।
সাইফুল্লাহ সিফাত, সি সেফ লাইফগার্ডের সুপারভাইজার

সি সেফ লাইফগার্ডের সুপারভাইজার সাইফুল্লাহ সিফাত বলেন, আজ সকাল সাতটা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত সৈকতের কলাতলী, সুগন্ধা, সিগাল ও লাবণী পয়েন্টের চার কিলোমিটারে নেমেছেন অন্তত ১২ হাজার মানুষ। বেশির ভাগই ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল সাগরে গোসল করছেন।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম বলেন, বৈরী পরিবেশে সমুদ্র উত্তাল রয়েছে। ৩ নম্বর সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হচ্ছে। তবু কিছু পর্যটক সমুদ্রে নেমে গোসল করছেন। এবারের দুর্যোগে জোয়ারের পানি আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতিমধ্যে ট্যুরিস্ট পুলিশের একটি হেল্পডেক্স উপড়ে পড়েছে। সৈকতের বালুচর বিলীন হয়ে অসংখ্য ঝাউগাছ উপড়ে গেছে। লাবণী পয়েন্টের প্রতিরক্ষা বেড়িবাঁধও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এত উচ্চতার জোয়ার আগে দেখেননি বলে জানিয়েছেন লাবণী পয়েন্টে দায়িত্বরত লাইফগার্ডের কর্মী মোহাম্মদ জহির। তাঁর ভাষ্য, সৈকতের বালিকা মাদ্রাসা পয়েন্ট থেকে শুরু করে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটারের বালিয়াড়ি ভেঙে যাচ্ছে। বালিয়াড়ি বিলীন হওয়ায় সৈকতের সৌন্দর্যহানি ঘটছে।

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঝুঁকি নিয়ে সৈকতে গোসলে নেমেছেন পর্যটকেরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে
ছবি: প্রথম আলো

সমুদ্র উত্তাল থাকায় সকাল থেকে পানিতে নামতে দেওয়া হয়নি দ্রুতগতির নৌযান জেডস্কি। পর্যটকেরা জেডস্কিতে চড়ে গভীর সমুদ্রে ঘুরে আসেন বেশি। তবে বিপুল পর্যটক টিউবে গা ভাসিয়ে উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে ঝুঁকি নিয়ে খেলছেন।

লাইফগার্ডের কর্মীরা জানান, রাত তিনটা থেকে সৈকতে জোয়ার শুরু হয়, তা সকাল নয়টা পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। জোয়ারের সময় গোসলে নামা নিরাপদ। ভাটা শুরু হয় সকাল সোয়া নয়টা থেকে, চলে বিকেল পৌনে চারটা পর্যন্ত। কিন্তু এ সময়েই অধিকাংশ পর্যটক সমুদ্রে নামেন গোসলের জন্য। ভাটার সময় স্রোতের টান বেশি থাকে, তাই ভাটার সময় গোসলে নামা বিপজ্জনক।

সমুদ্র উত্তাল থাকায় সকাল থেকে পানিতে নামতে দেওয়া হয়নি দ্রুতগতির নৌযান জেডস্কি। পর্যটকেরা জেডস্কিতে চড়ে গভীর সমুদ্রে ঘুরে আসেন বেশি। তবে বিপুল পর্যটক টিউবে গা ভাসিয়ে উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে ঝুঁকি নিয়ে খেলছেন।

পুলিশ জানায়, গত ২০ জুলাই কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের উখিয়ার রয়েল টিউলিপ সি পার্ল বিচ রিসোর্টের সামনে সমুদ্রসৈকতে গোসলে নেমে মারা যায় মো. আবদুল্লাহ (১৬) নামের এক কিশোর। বেলা ১১টায় ভাটার সময় তিন খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে সৈকতে গোসলে নেমে নিখোঁজ হয়। সন্ধ্যায় তার লাশ ভেসে ওঠে। নিহত আবদুল্লাহ রাজধানীর বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। সে পরিবারের সঙ্গে থাকত রাজধানীর মহাখালীর ডিওএইচএস এলাকায়।

কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা বলেন, গত ১২ বছরে সমুদ্রে গোসলে নেমে অন্তত ৯৮ জন পর্যটকের মৃত্যু হলেও সৈকতের কোথাও নিরাপদ গোসলের ব্যবস্থা (নেটিং সিস্টেম) নেই।