মিয়ানমার সীমান্তে শূন্যরেখায় দুই পক্ষের গোলাগুলি, একজন নিহত

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমের তমব্রু সীমান্ত
ফাইল ছবি

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমের তমব্রু সীমান্তের কোনারপাড়ার শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে মিয়ানমারের সশস্ত্র দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনায় হামিদ উল্লাহ (২৭) নামের একজন নিহত এবং গুলিবিদ্ধ হয়ে মুহিব উল্লাহ (২৫) নামের একজন আহত হয়েছেন।

মুহিব উল্লাহকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছে। নিহত ও আহত ব্যক্তির পরনে বিশেষ রঙের পোশাক রয়েছে। তাঁরা মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বলে ধারণা করছে পুলিশ।

আজ বুধবার সকাল ৬টার পর থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত গোলাগুলির ঘটনার প্রসঙ্গে জানতে  জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজির সরকারি মুঠোফান নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। এ কারণে তাঁর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা প্রথম আলোকে বলেন, ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে শূন্যরেখায় মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী দুটি পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে। সীমান্তে তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।

তমব্রু সীমান্তের কোনারপাড়া শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরে বসবাসকারী রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, ‘সকালে মিয়ানমারের সশস্ত্র গ্রুপ রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) সশস্ত্র গোষ্ঠী সদস্যরা নাইক্ষ্যংছড়ির কোনারপাড়া শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা আশ্রয়সংলগ্ন এলাকায় এসে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরে তা শূন্যরেখার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরেও ছড়িয়ে পড়ে।’

শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরে বসবাসকারী রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, প্রাথমিকভাবে আধিপত্য বিস্তারের জেরে মিয়ানমারের সশস্ত্র দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে কী কারণে এ সংঘর্ষের ঘটনা, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

দিল মোহাম্মদ বলেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে অব্যাহত এ গোলাগুলির ঘটনায় শূন্যরেখায় বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকে আশ্রয়শিবিরের ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছেন। এতে তাঁরা নানা সংকটে ভুগছেন।
ঘুমধুম ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, সকাল থেকে অব্যাহত গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। ওখানে কী হচ্ছে, বলা যাচ্ছে না। তবে স্থানীয় ব্যক্তিরা চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।

বিষয়টি নিয়ে মুঠোফোনে বিজিবির ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলার জন্য তাঁর মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

নাইক্ষ্যংছড়ির ইউএনও রোমেন শর্মা প্রথম আলোকে বলেন, সকাল থেকে তমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় থেমে থেমে গোলাগুলির খবর স্থানীয় মানুষের মাধ্যমে জেনেছেন। মিয়ানমারে বিচ্ছিন্নতা গোষ্ঠীর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আরএসও এবং আরসার মধ্যে এ গোলাগুলি চলছিল। ঘটনাটি যেহেতু শূন্যরেখায়, সেখানে আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী বিজিবিসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ করার এখতিয়ার নেই। তারপরও সীমান্তের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বিজিবি, র‍্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং প্রশাসন এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছে।

উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকালের কোনো এক সময় সীমান্তের গোলাগুলিতে গুলিবিদ্ধ এক রোহিঙ্গাকে আহত অবস্থায় কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। একই সঙ্গে গুলিবিদ্ধ আহত এক রোহিঙ্গাকেও কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহতের ব্যক্তি নাম হামিদ উল্লাহ এবং গুলিবিদ্ধ ব্যক্তির নাম মুহিব উল্লাহ বলে জানা গেছে। বিস্তারিত পরিচয় নেওয়ার চেষ্টা চলছে। নিহত ও আহতের গায়ে বিশেষ রঙের পোশাক রয়েছে। তাঁরা মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বলে ধারণা করা হচ্ছে।