নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় গণপিটুনিতে এক যুবক নিহত হয়েছেন। মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোক জড়ো করে তাঁকে গণপিটুনি দেওয়া হয়। আজ সোমবার সকাল আটটার দিকে উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ হাজীপুর গ্রামের মন্দার বাড়ির দরজার সামনে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তির নাম ফখরুল ইসলাম ওরফে মঞ্জু (২৫)। তিনি চৌমুহনী পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পৌর হাজীপুর গ্রামের রোহন মিয়ার ছেলে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও চাঁদাবাজির চারটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলেও তিনি পলাতক ছিলেন।
হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশের সদস্য মো. রাশেদ প্রথম আলোকে বলেন,আজ সকালে হাজীপুর ১ নম্বর ওয়ার্ডের আবদুল মোতালেবের ছেলে মিজানুর রহমান বাড়ি থেকে বের হয়ে অটোরিকশায় করে চৌমুহনী যাচ্ছিলেন। এ সময় ফখরুল তাঁর গতিরোধ করে চাঁদা দাবি করেন। বিষয়টি নিয়ে দুজনের বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোকজন জড়ো করা হয়। মুহূর্তের মধ্যে গ্রামবাসী জড়ো হয়ে ফখরুলকে গণপিটুনি দিলে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
রাশেদ আরও বলেন, গণপিটুনিতে ফখরুল নিহত হলে তাঁর লাশ হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী তিন রাস্তার মোড়ে সড়কের পাশে ফেলে রাখা হয়। খবর পেয়ে বেগমগঞ্জ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। এরপর লাশটি থানায় নিয়ে যায়।
হাজীপুর ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও চৌমুহনী বাজারের ব্যবসায়ী আবদুল মোতালেব বলেন, ‘আমার ছেলে বাড়ি থেকে ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে দোকানে যাচ্ছিল। পথে অটোরিকশা থেকে নামিয়ে কিছু টাকা ছিনিয়ে নেয় ফখরুল। এ সময় আমার ছেলেকে মারধর শুরু করলে তার চিৎকারে এলাকার লোকজন এগিয়ে এসে ফখরুলকে গণপিটুনি দিয়েছেন। এ সময় ফখরুলের মৃত্যু হয়। এরপর ফখরুলের স্বজনেরা আমার বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর চালিয়েছেন।’
তবে নিহত ফখরুলের চাচাতো ভাই মো. হাসান অভিযোগ করেন, পূর্বশত্রুতার জেরে ফখরুলকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি। হাসান বলেন, ‘ফখরুল তাঁর বোন রেহানা আক্তারের বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে যাচ্ছিলেন। এ সময় ১৫-১৬ জনের একদল লোক তাঁকে আটক করে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেছেন।’
জানতে চাইলে বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল বারি প্রথম আলোকে বলেন, ফখরুল এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ। তিনি দুটি মামলার পলাতক আসামি। সকালে তিনি এক ব্যক্তির কাছে চাঁদা দাবি করেন, এতে ঝামেলা বাধে। এলাকাবাসী মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোক জড়ো করে তাঁকে গণপিটুনি দিয়েছেন। এ সময় তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
ওসি আরও বলেন, লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।