গাজীপুরে দুই মহাসড়কে যানবাহনের চাপ

ঈদ সামনে ছুটতে শুরু করেছে ঘরমুখো মানুষ। সঙ্গে যানবাহনের চাপ বাড়তে শুরু করেছে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে। আজ সকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

পবিত্র ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ১০ বা ১১ এপ্রিল (চাঁদ দেখা সাপেক্ষে)। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে ঈদযাত্রা। ঈদে ঘরমুখী মানুষ ও যানবাহনের চাপ বেড়েছে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে। আজ শুক্রবার সকাল থেকে এই দুই মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্টপেজগুলোয় যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। কিছু কিছু পয়েন্টে যানবাহন চলছে ধীরগতিতে।

সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ঘুরে দেখা গেছে, মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা, ভোগড়া বাইপাস মোড়, বোর্ড বাজার ও স্টেশন রোডসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোয় অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। যাত্রীর তুলনায় যানবাহন কম থাকায় অনেককে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। যাঁদের আগে ছুটি হয়েছে, তাঁরা গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকে গ্রামের বাড়ির পথে ছুটতে শুরু করেছেন। আজ সকালেও একই অবস্থা দেখা গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মহাসড়কে ঘরমুখী মানুষ ও যানবাহনের চাপ বাড়ছে। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তাসহ আশপাশে যানবাহনের চাপ দেখা গেছে।

চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় কথা হয় স্থানীয় দোকানি কাইয়ুম মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, চৌরাস্তা এলাকায় উড়ালসড়ক নির্মাণ করা হলেও মাঝেমধ্যে একটা লেন বন্ধ রাখা হয়। এতে জয়দেবপুর থেকে ঢাকাগামী লেনে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া ময়মনসিংহগামী সড়কের উড়ালসড়ক যেখানে নেমেছে, সেখানেও অবৈধ পার্কিং এবং যাত্রী ওঠা-নামার কারণে প্রায় যানজট হচ্ছে।

শহিদুল ইসলাম নামের এক বাসচালক বলেন, ওপর দিয়ে এসে যাত্রী নামানোর জন্য বাস থামাতে হয়। বাসস্ট্যান্ড নেই, তাই যার যেখানে খুশি, সেখানেই দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানো ও নামানো হয়। এতে কিছুটা যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্টপেজগুলোয় যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। কিছু কিছু পয়েন্টে যানবাহন চলছে ধীরগতিতে। আজ সকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

অন্যদিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় সকাল থেকেই যানবাহনের ব্যাপক চাপ ছিল। এতে চন্দ্রা থেকে কালিয়াকৈর অংশে যানবাহনের তেমন চাপ না থাকলেও কালিয়াকৈর-নবীনগর সড়কে সকাল থেকেই যানবাহনের সারি দেখা গেছে। ওই সড়কে থেমে থেমে যান চলছে। হাইওয়ে পুলিশ বলছে, চন্দ্রা ত্রিমোড়ে যাত্রীবাহী বাসগুলো ইচ্ছেমতো থামিয়ে যাত্রী ওঠানোর ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। এতে পেছনের গাড়িগুলো স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না।

নাওজোড় হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি ছুটি শুরু না হলেও গতকাল রাত থেকে ঘরমুখো মানুষ গ্রামে যাওয়া শুরু করেছে। যে কারণে রাত থেকে যানবাহনের চাপ বাড়তে শুরু করেছে। শিল্পকারখানা ছুটি হলে যানবাহনের চাপ আরও কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশ, থানা-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।

কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকার পোশাক কারখানার শ্রমিক কফিল উদ্দিন বলেন, ‘কারখানা ছুটি হবে আরও দুই-তিন দিন পর। তখন বাসে অনেক ভিড় হবে। তাই স্ত্রী ও দুই সন্তানকে গ্রামের বাড়ি রংপুরে পাঠিয়ে দিচ্ছি। এখনই বাস পেতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। ভাড়াও আগের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। তারপরও তাদের পাঠিয়ে দিলাম। কারখানা ছুটি হলে আমার কষ্ট হলেও চলে যেতে পারব।’

হাইওয়ে পুলিশ বলছে, চন্দ্রা ত্রিমোড়ে যাত্রীবাহী বাসগুলো ইচ্ছেমতো থামিয়ে যাত্রী ওঠানোর ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়। আজ সকালে
ছবি: প্রথম আলো

শ্যামলী পরিবহনের চালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘দুই পাশেই ফাঁকা থাকে, কিন্তু চন্দ্রা মোড় এলেই যানবাহনের জটলা। কোনো কারণ নেই, বাসগুলো দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠাতে সময়ক্ষেপণ করছে। এ কারণে পেছনের বাসগুলো সামনে আগাতে পারছে না।’

এ ব্যাপারে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) উপকমিশনার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ঈদযাত্রায় মহাসড়কে যানবাহন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। অতিরিক্ত রেকার রাখা হবে। যাতে যানবাহন বিকল হলে তা দ্রুত সরিয়ে নেওয়া যায়। গত বছর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যাত্রা অনেকটাই স্বস্তিদায়ক ছিল। এবার চান্দনা চৌরাস্তা ও ভোগড়া এলাকায় দুটি উড়ালসড়ক চালু হওয়ায় আশা করছি, এবার আরও স্বাচ্ছন্দ্যময়  হবে ঈদযাত্রা।’

চন্দ্রায় বসেছে সিসিটিভি ক্যামেরা, ড্রোন দিয়ে পর্যবেক্ষণ

চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় উড়ালসড়ক নির্মাণ করা হলেও শেষ মুহূর্তে যানবাহনের চাপ এতটাই বেড়েছে, যা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে বাইরে চলে যাচ্ছে। তাই এবার অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি চন্দ্রার আশপাশে বসানো হয়েছে ৩২টি সিসিটিভি। এ ছাড়া সার্বক্ষণিক সড়ক পর্যবেক্ষণের জন্য রাখা হয়েছে ড্রোন।

নাওজোড় হাইওয়ে থানার ওসি মো. শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, যানজটপ্রবণ স্থানগুলো চিহ্নিত হয়ে চন্দ্রা আশপাশে ৩২টি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া সড়ক পর্যবেক্ষণের জন্য আনা হয়েছে বড় আকারে একটি ড্রোন। কন্ট্রোল রুম থেকে এসব ক্যামেরার ছবি দেখে বোঝা যাবে, কী কারণে যানজট হচ্ছে। সেগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধান করা হবে। এতে আশ করছি ঈদযাত্রা যানজট মুক্ত হবে।

এদিকে, গতকাল দুপুরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক পরিদর্শন করেছেন হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি শাহাবুদ্দিন খান। চন্দ্রায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শাহাবুদ্দিন খান বলেন, ‘গত কয়েক বছরের ঈদযাত্রা যেমন সুন্দর হয়েছে, নিরাপদ হয়েছে, স্বাচ্ছন্দ্যময় হয়েছে, যানজট মুক্ত হয়েছে, এবারেও এই রকম স্বাচ্ছন্দ্যময়, যানজটমুক্ত এবং আরও একটু ভালো, ঈদযাত্রা জনগণকে উপহার দিতে সক্ষম হব।’

হাইওয়ে পুলিশের প্রধান এ সময় ঝুঁকিপূর্ণ ও অনিরাপদ যাত্রায় শামিল না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘শিল্পকারখানা–অধ্যুষিত অঞ্চলের শ্রমিক ভাইয়েরা, তাঁরা কিন্তু অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রায় শামিল হন। খোলা ট্রাকে ওঠে, পিকআপে ওঠে, বাসের ছাদে ওঠে। এভাবে নানানভাবে নিজের জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলে এবং অনেকবার দেখেছি, অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে বহু জীবন ঝরে পড়েছে। সেই ক্ষেত্রে আমরা বলব, আপনারা সচেতনভাবে নিজের জীবনকে ভালোবেসে, অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রায় শামিল হবেন না।’