নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর পর্যটকে মুখর বান্দরবানের বগালেক
রুমা উপজেলার সদর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই লেকে বছরজুড়েই লেগে থাকত পর্যটকদের ভিড়। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রায় তিন বছর ধরে অনেকটা নিষ্প্রাণ ছিল বগালেক।
দীর্ঘ সময় পর আবারও পর্যটকে মুখর হয়ে উঠতে শুরু করেছে বান্দরবানের রুমা উপজেলার বগালেক। ৬ জুন বগালেক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে জেলা প্রশাসন। এরপর রোববার থেকে বগালেকে পর্যটক সমাগম শুরু হয়েছে। এতে বেশ খুশি পর্যটন–সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
গতকাল সোমবার বগালেকে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে এসেছেন শতাধিক পর্যটক। তাঁদের বেশির ভাগই এসেছেন মোটরসাইকেল নিয়ে এবং বয়সে তরুণ। কয়েকজনকে দেখা গেল, তাঁরা রাতযাপনের জন্য কটেজ খুঁজছেন। কথা হয় সিলেট থেকে আসা মো. তুষার নামের এক তরুণের সঙ্গে। তিনি জানান, তাঁরা চারজনের একটি দল বান্দরবান ঘুরতে আসার পর জানতে পারেন, বগালেক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। বগালেকের পাশেই রাত কাটাতে চান। চট্টগ্রাম নগর থেকে আসা আকরাম হোসেন নামের আরেক পর্যটক বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর আমরাই প্রথম দল, যারা বগালেকে রাতযাপন করেছি। শুরুতে আসার কারণে আপ্যায়ন বেশি পাচ্ছি।’
সরেজমিনে দেখা যায়, বগালেকে বমদের প্রায় ৩০টি কটেজ ও অবকাশযাপনকেন্দ্রের চার থেকে পাঁচটি ছাড়া সব কটি থাকার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কোনোটাতে বেড়া, কোনোটাতে খুঁটি ভেঙে গেছে। বিছানাপত্র, আসবাবও নষ্ট। দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে ভেতর থেকে। একটি কটেজ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজে ব্যস্ত দেখা যায় লালখিম বম নামের একজনকে। তিনি বলেন, তাঁর তিনটি কটেজ রয়েছে। সব কটি কটেজ থাকার উপযোগী করতে আরও এক সপ্তাহ লাগবে। অনেকে ফোন করে কটেজ বুকিং দিতে চাচ্ছেন, তবে তিনি এসব পর্যটককে এক সপ্তাহ পর আসার জন্য বলেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বগালেকে বমদের প্রায় ৩০টি কটেজ ও অবকাশযাপনকেন্দ্রের চার থেকে পাঁচটি ছাড়া সব কটি থাকার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কোনোটাতে বেড়া, কোনোটাতে খুঁটি ভেঙে গেছে। বিছানাপত্র, আসবাবও নষ্ট। দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে ভেতর থেকে।
বগালেক এলাকায় একটি দোকান রয়েছে জিংমুন বমের। তিনি বলেন, হঠাৎ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে তাঁরা সবাই অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়েছেন। কটেজ-অবকাশ যাপনকেন্দ্র নষ্ট হওয়ায় তিনি ছয়জন পর্যটককে নিজের বাড়িতে থাকতে দিয়েছেন। বাড়িতে থাকা মুরগি দিয়ে পর্যটকদের আপ্যায়ন করেছেন।
বগালেক এলাকায় আটটি কটেজ ও রিসোর্ট রয়েছে সিয়াম বমের। তিনি বলেন, তাঁর একটি কটেজ ছাড়া বাকিগুলো থাকার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তবে এসব কটেজ সংস্কার করবেন কি না, তা নিয়ে ভাবছেন। কারণ, ধারদেনা করে মেরামতের পর আবার যদি ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আসে, সে ক্ষেত্রে তাঁকে বেকায়দায় পড়তে হবে।
দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কেওক্রাডাং পাহাড়ের ১ হাজার ৭৩ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত বগালেক। রুমা উপজেলার সদর থেকে ১৪ কিলোমিটার দুরে মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই লেকে বছরজুড়েই লেগে থাকত পর্যটকদের ভিড়। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রায় তিন বছর ধরে অনেকটা নিষ্প্রাণ ছিল বগালেক।
বগালেকের সঙ্গে থানচির তুমাতুঙ্গি ও তিন্দুতে ভ্রমণেও নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে থানচির তুমাতুঙ্গি ও তিন্দু বড়পাথর এলাকা পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হলেও সেখানে পর্যটকদের থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। রাতে উপজেলা সদরে পর্যটকদের থাকতে হচ্ছে বলে জানান ট্যুরিস্ট গাইড সমিতির সভাপতি মো. মামুন।
জেলা হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জসীম উদ্দিন বলেন, রুমা ও থানচি হচ্ছে জেলার পর্যটনের প্রাণশক্তি। প্রকৃতিপ্রেমী হাজারো মানুষ বনবাদাড়ে, ঝিরি-ঝরনায়, পাহাড়ে, পাহাড়ি গ্রামে ঘুরে বেড়ায়। সেখানে গড়ে ওঠা কমিউনিটি ট্যুরিজম ও হোম স্টে ট্যুরিজমই স্থানীয় পাহাড়িদের অন্যতম আয়ের উৎস। দুই উপজেলায় যাওয়া-আসার পথে জেলা শহরও পর্যটকমুখর থাকে। জেলার সব পর্যটন স্পট পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দিলে পর্যটকদের ভিড় বাড়বে।
রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আদনান চৌধুরী বলেন, পর্যটকেরা আসতে শুরু করেছেন। তাঁদের মাধ্যমে বগালেক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা না থাকার বিষয়টি অন্যরাও জানার সুযোগ পাচ্ছেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আকর্ষণীয় অন্য স্থানগুলোতেও পর্যায়ক্রমে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে।