আর্থিক সহায়তা ও ব্র্যাকের ল্যাপটপ উপহার পেলেন শারীরিক প্রতিবন্ধী এলাহী

সুজন মোহাম্মদ এলাহী হোসেনের হাতে টাকা ও ল্যাপটপ তুলে দিচ্ছেন ব্র্যাকের চেয়ারপারসন হোসেন জিল্লুর রহমান। আজ বৃহস্পতিবার বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার বেতগাড়ি এলাকায় ব্র্যাকের লার্নিং সেন্টারেছবি: প্রথম আলো

জন্ম থেকেই সুজন মোহাম্মদ এলাহী হোসেনের (২৭) দুই পা অচল। হাত দুটিও স্বাভাবিক নয়; কোনো রকমে নড়াচড়া করতে পারেন। চলাফেরায় হুইলচেয়ারই ভরসা। হতদরিদ্র পরিবারের এই সদস্যের পঞ্চম শ্রেণির গণ্ডি পেরোনোর পর পড়ালেখাও বন্ধ হয়ে যায়।

এরই মধ্যে আক্রান্ত হন মলদ্বারের পাইলসের সমস্যায়। কিন্তু এলাহী হোসেনের দিনমজুর বাবার পক্ষে পাইলসের অস্ত্রোপচারের খরচ বহনের সামর্থ্য নেই। এমন পরিস্থিতিতে তিনি বেঁচে থাকার একটা পথ খুঁজতে থাকেন। মুঠোফোনে ইন্টারনেট দুনিয়া সম্পর্কে ধারণা ছিল আগে থেকেই। গ্রাফিকস ও ফিল্যান্সিংয়ের ওপর টুকটাক ধারণা ছিল। মা রেবেকা বিবি ক্ষুদ্রঋণ নেওয়ায় বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের কথা মাথায় আসে তাঁর। অন্যের মুঠোফোনে গুগল করে ব্র্যাক ও ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনাল সম্পর্কে ধারণা নেন। এরপর ব্র্যাকের চেয়ারপারসন হোসেন জিল্লুর রহমানকে হোয়াটসঅ্যাপে কল দেন। অপর প্রান্ত থেকে সাড়া দেন তিনি। এলাহী হোসেনের অসহায়ত্বের কথা শোনেন। এরপর তিনি সংস্থাটির পক্ষ থেকে এলাহী হোসেনের চিকিৎসা দেওয়ার কথা জানান।

সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এলাহী হোসেনের হাতে ব্র্যাকের পক্ষ থেকে চিকিৎসা সহায়তা বাবদ ৩০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে মেধা ও সৃজনশীলতা কাজে লাগিয়ে প্রতিবন্ধী এই তরুণ যাতে ফ্রিল্যান্সিং করে সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে পারেন এ জন্য ব্র্যাকের পক্ষ থেকে তাঁকে একটি ল্যাপটপ উপহার দেওয়া হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বগুড়ার বেতগাড়ি এলাকায় ব্র্যাকের লার্নিং সেন্টারে (আঞ্চলিক প্রশিক্ষণকেন্দ্র) আনুষ্ঠানিকভাবে এলাহী হোসেনের হাতে টাকা ও ল্যাপটপ তুলে দেওয়া হয়। ব্র্যাক মাইক্রো ফাইন্যান্স কর্মসূচির উদ্যোগে এ মানবিক উদ্যোগ নেওয়া হয়।

এলাহী হোসেন বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের ফুটানিগঞ্জ গ্রামের দিনমজুর ফরিদ উদ্দিনের ছেলে।

প্রতিবন্ধী সুজন মোহাম্মদ এলাহী হোসেনের সঙ্গে ব্র্যাকের চেয়ারপারসন হোসেন জিল্লুর রহমান
ছবি: ব্র্যাকের সৌজন্যে

অনুষ্ঠানে ব্র্যাকের চেয়ারপারসন হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, শুধু রাষ্ট্রের পক্ষে সমাজের সব অসহায় পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কাজ করা সম্ভব নয়। এ জন্য সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা অত্যন্ত জরুরি। ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ মানবিকতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই ব্র্যাকের সূচনা করেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, সামাজিক শক্তি ও সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমে একটি মানবিক সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।

হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, জন্মগতভাবে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষ হয়েও এলাহী হোসেন নিজের উদ্যোগ, প্রতিভা ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে ভাগ্য পরিবর্তনের পথ খুঁজছেন। ব্র্যাক তাঁর এ প্রচেষ্টার পাশে থেকে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সহায়তা ও প্রেরণা জুগিয়েছে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাইফুর রহমান ও বগুড়া জেলা প্রতিবন্ধীবিষয়ক কর্মকর্তা মর্জিনা আক্তার।
চিকিৎসা সহায়তার সঙ্গে ল্যাপটপ উপহার পেয়ে সুজন মোহাম্মদ এলাহী বলেন, ‘ব্র্যাকের চেয়ারপারসন হোসেন জিল্লুর রহমান মনোযোগ দিয়ে সমস্যা শুনেছেন। ফ্রিল্যান্সিংয়ের আগ্রহ শুনে চিকিৎসা সহায়তার সঙ্গে ল্যাপটপ উপহার দিতে নিজেই বগুড়ায় ছুটে এসেছেন। ব্র্যাকের এ সহায়তা আমার স্বপ্নপূরণে সহায়ক হবে।’