পাঁচ লাখ টাকায় শুরু, তাহেরার এখন কোটি টাকার প্রতিষ্ঠান

নারী উদ্যোক্তা তাহেরা জামান

পড়েছেন ইংরেজি সাহিত্যে, কিন্তু তাঁর যত আগ্রহ ফ্যাশন ঘিরেই। অন্যদের চেয়ে স্বতন্ত্র থাকবেন বলে নিজের তৈরি নকশায় জামা-শাড়ি বানাতেন। তাঁর এসব কাজ দেখে আত্মীয়স্বজনও তাঁর কাছ থেকেই জামা-শাড়ি বানিয়ে নিতেন। এভাবেই শখ থেকে প্রথমে নিজস্ব নকশায় কাপড় প্রস্তুত করতেন। তাঁর প্রস্তুত করা কাপড় সবাই পছন্দ করতে শুরু করলে বাণিজ্যিকভাবে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন। এখন এ প্রতিষ্ঠানই দেশ-বিদেশে সুপরিচিত। পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে চালু হওয়া এ প্রতিষ্ঠান এখন কোটি টাকার প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী হলেন তাহেরা জামান নামের এক নারী। তিনি সিলেটের মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করেছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠানটির নাম নূর নগরী। এটি মূলত কাপড়ের দোকান। পাশাপাশি এর সঙ্গে সংযুক্ত আছে টেইলার্সের ব্যবসাও। ২০১১ সালে মাত্র ৫ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। এখন প্রতিষ্ঠানটির সব মিলিয়ে মূল্য আছে অন্তত এক কোটি টাকা। যেখানে শুরুতে কর্মী ছিলেন মাত্র একজন, এখন সেখানে ৪০ থেকে ৪৫ জন কর্মী আছেন।

তাহেরা জামান বলেন, ক্ষুদ্র একজন উদ্যোক্তা থেকেই মূলত তিনি তাঁর ব্যবসার পসার বাড়িয়েছেন। ফ্যাশন নিয়ে পড়াশোনা না থাকলে নিজের সৃষ্টিশীলতাকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি এ বিষয়ে ব্যাপক পড়েছেন। একপর্যায়ে কাপড় কিনে তিনি নিজের নকশায় সেসব প্রস্তুত করা শুরু করেন। দোকান দেওয়ার পর ভিন্ন ভিন্ন নকশার এসব থ্রি-পিস ও শাড়ি কেনার জন্য তরুণী-নারীরা ভিড় জমাতে শুরু করেন। এ ছাড়া তাঁর ফেসবুক পেজের অনুসারীও আড়াই লাখ। অনলাইনেও দেশ-বিদেশ থেকে তাঁর নকশা করা কাপড়ের চাহিদা দিন দিন বাড়তে থাকে। দোকানের পাশাপাশি অনলাইনেও তাঁর কাপড় এখন ব্যাপক চাহিদা। এমনকি প্রবাস থেকেও নিয়মিত ৪০০ থেকে ৫০০ জন অনলাইনে কাপড় কিনে থাকেন।

উদ্যোক্তা তাহেরার বিয়ে হয় ২০১০ সালে। স্বামী কবিরুল হাসান ব্যাংক কর্মকর্তা। শ্বশুর-শাশুড়ি আর স্বামীকে নিয়ে নগরের পীরমহল্লা এলাকায় তাঁর সংসার। স্বামীর সহযোগিতায় ২০১১ সালে তিনি নগরের সুবিদবাজার এলাকায় নূর নগরী চালু করেন। এ দোকানের সঙ্গেই তাঁর নূর নগরী টেইলারিং স্টুডিও নামের আরেকটা প্রতিষ্ঠান আছে। এ স্টুডিওতে তাহেরা নিজের নকশার কাপড় প্রস্তুতের পাশাপাশি বিভিন্ন দোকানের চাহিদা অনুযায়ী কাপড় সেলাই ও প্রস্তুত করে দেন। অনলাইনেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কাপড় প্রস্তুত করে দেওয়ার জন্য চাহিদা আসে স্টুডিওর পেজে। নূর নগরীর ফেসবুক পেজ ২০১৩ সালে চালু হলেও মূলত কোভিড-১৯ সময়ে পেজের চাহিদা বাড়ে। এর পর থেকে এখন এসব পেজে প্রতিদিনই অসংখ্য অর্ডার আসতে থাকে।

তাহেরা জামান জানান, তাঁর নিজস্ব নকশার কাপড়ের পাশাপাশি নূর নগরীতে এখন ভারতীয় ও পাকিস্তানি নানা থ্রি-পিসও পাওয়া যায়। বুটিক, বাটিক, এমব্রয়ডারি, ব্লকের নানা কাপড় পাওয়া যায়। শাড়ি, থ্রি-পিস, চাদর, বিছানা চাদর, শালও এখানে মেলে। পাইকারি ও খুচরা উভয় ধরনের বিক্রিই এখানে হয়ে থাকে। এ ছাড়া ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের তাঁতিদের কাছ থেকে হাতের তৈরি করা কাপড় এনেও এখান থেকে বিক্রি করা হয়ে থাকে।

দোকান চালুর পাশাপাশি ২০১৫ সালের দিকে তাহেরা জামান স্কলার্সহোম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার চাকরি নেন। তিনি চাকরি ২০১৮ সালে ছেড়ে ব্যবসায় মনোযোগ দেন। এখন তিনি অনেক নারীর কাছে আদর্শ উদ্যোক্তাও। বর্তমানে তাহেরা সিলেট উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির একজন পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।