মুন্সিগঞ্জ-২ আসন
দুজন ছাড়া বাকিরা ‘অচেনা’
আসনটিতে মোট প্রার্থী ৯ জন। এর মধ্যে প্রচারণায় আছেন শুধু আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থী।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুন্সিগঞ্জ-২ (টঙ্গিবাড়ী-লৌহজং) আসন থেকে নয়জন প্রার্থী হয়েছেন। তবে ভোটের প্রচারণায় আছেন আওয়ামী লীগ ও এক স্বতন্ত্র প্রার্থী। অন্যদের ব্যানার–পোস্টারও তেমন নেই। আসনটির ভোটাররা বলছেন, নৌকা ও ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী ছাড়া অন্যদের চেনেন না তাঁরা।
নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন সাগুফতা ইয়াসমিন। তিনি পরপর তিনবার এ আসনের সংসদ সদস্য। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ট্রাক প্রতীকে নির্বাচন করছেন মুন্সিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহানা তাহমিনা।
এ ছাড়া আম প্রতীক নিয়ে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. জালাল ঢালী, সোনালী আঁশ প্রতীক নিয়ে তৃণমূল বিএনপির মো. জাহানুর রহমান, ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ সাইরাজ খান, চেয়ার প্রতীকে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের প্রার্থী মোহাম্মদ সহিদুর রহমান, ছড়ি প্রতীক নিয়ে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের নুরে আলম সিদ্দিক, ডাব প্রতীক নিয়ে বাংলাদেশ কংগ্রেসের কামাল খান, টেলিভিশন প্রতীক নিয়ে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের বাচ্চু শেখ রয়েছেন।
প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে প্রচারে তৎপর রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাগুফতা ইয়াসমিন ও ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সোহানা তাহমিনা। প্রতিদিনই তাঁরা তাঁদের স্বজন ও অনুসারীদের নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।
গত সোমবার সকাল ১০টার দিকে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার সুবচনি বাজার এলাকায় গিয়ে নৌকা ও ট্রাক প্রতীকের পোস্টার চোখে পড়ে। অন্য প্রার্থীদের পোস্টার দেখা যায়নি। এ সময় একটি চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন স্থানীয় পাঁচ-সাতজন মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি। চায়ের চুমকের ফাঁকে ফাঁকে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী, প্রতীক, ভোট দেওয়া নিয়ে কথা বলছিলেন তাঁরা। তাঁদের সবার ভাষ্য, বিএনপি নির্বাচনে না থাকায় ভোটের আমেজ কম। ট্রাক ও নৌকার প্রার্থী ছাড়া কেউ ভোট চাইতে আসেননি। এলাকায় অন্যদের পোস্টারও নেই। তাঁদের চেনেন না বলেও দাবি করেন ওই ভোটাররা।
টঙ্গিবাড়ী উপজেলার উত্তর হলদিয়া গ্রামের নুরজাহান বেগম নামের এক নারী ভোটার বলেন, ‘নৌকার প্রার্থীকে চিনি। ট্রাকের প্রার্থীর ছবি দেখেছি, নাম শুনেছি। অন্যদের কাউকে চিনিই না।’
সুবচনি বাজার থেকে বেড়িয়ে বালিগাঁও হয়ে লৌহজংয়ের দিকে যেতে সড়কের পাশে নৌকা ব্যানার–পোস্টার দেখা যায়। সঙ্গে ছিল অল্পসংখ্যক ট্রাক প্রতীকের পোস্টার। সাগুফতা ইয়াসমিনের গ্রামের বাড়ি লৌহজংয়ের গাঁওদিয়া এলাকায়। সোহানা তাহমিনা টঙ্গিবাড়ী উপজেলার মান্দ্রা এলাকার বাসিন্দা। সাগুফতা দুই উপজেলায় সমানতালে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এদিক দিয়ে কিছুটা পিছিয়ে সোহানা তাহমিনা। তিনি টঙ্গিবাড়ীতে সরব হলেও লৌহজংয়ে প্রচারে কিছুটা পিছিয়ে।
এ আসনে ভোটার ৩ লাখ ৫২ হাজার ৫১৬ জন। এলাকার বড় সমস্যা পদ্মা নদীর ভাঙন। এ ছাড়া পদ্মা নদীর মাটি লুট, খাল দখল, ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতা, টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভাঙাচোরা কাঁচা রাস্তাঘাট এবং মাদকের বিস্তার এ নির্বাচনী এলাকার প্রধান সমস্যা।
তবে নৌকার প্রার্থী সাগুফতা ইয়াসমিনের দাবি, এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন তিনি। এবারও বিপুল ভোটে জয় প্রত্যাশা করছেন। সাগুফতা ইয়াসমিন বলেন, ‘জীবনের বেশির ভাগ সময় লৌহজং-টঙ্গিবাড়ী উপজেলার মানুষের সঙ্গে কাটিয়েছি। সব সময় তাদের সুখ-দুঃখে পাশে থেকেছি।
তাদের ভোটে তিনবার নির্বাচিত হয়েছি। দুই উপজেলার নদীভাঙন রোধে স্থায়ী কাজসহ অসংখ্য উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। তাই এ নির্বাচনী এলাকার মানুষ নৌকাকে ভালোবাসেন, আমাকে ভালোবাসেন। তাদের কারণে প্রধানমন্ত্রী এবারও আমাকে নৌকা দিয়েছেন। যেখানেই যাচ্ছি, ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। তাঁরা আবারও আমাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করতে কাজ করছেন।’
জয়ের বিষয়ে একই রকম প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সোহানা তাহমিনাও। তিনি বলেন, ‘মানুষের আগ্রহের কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। প্রতীক পাওয়ার পর থেকে প্রতিদিন নির্বাচনী আসনের বিভিন্ন এলাকার ভোটারদের কাছে যাচ্ছি। মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।’