‘ইভিএমে কীভাবে ভোট দিতে হবে, তা নাকি ভোটকেন্দ্রে গেলে শিখিয়ে দেবে’

আগামীকাল সোমবার খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। সে জন্য আজ সকাল থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রে ইভিএম পাঠানো হচ্ছে। আজ সকালে খুলনা মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে
ছবি: সাদ্দাম হোসেন

রাত পোহালেই খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এবার ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে। ব্যালটে ভোট দিতে অভ্যস্ত ভোটারদের অনেকে জানেন না ইভিএমে কীভাবে ভোট দিতে হয়। ইভিএম নিয়ে আরও প্রচার-প্রচারণার দরকার ছিল বলে মনে করেন অনেক ভোটার।

খুলনা নগরের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের শেখপাড়া আবুল সড়ক গলির বাসিন্দা আসমা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে কখনো এভাবে ভোট দিইনি। শুনছি এবার ভোট নতুন পদ্ধতিতে হবে। বাড়ির লোকজন বলছে কীভাবে দিতে হবে, তা নাকি ভোটকেন্দ্রে গেলে শিখিয়ে দেবে। বিষয়টা কেমন, কেন্দ্রে গিয়ে বুঝতে পারব।’

খুলনা সিটি করপোরেশনে ৩১টি ওয়ার্ডের আওতায় ভোটকেন্দ্র আছে ২৮৯টি। ভোটকক্ষ আছে ১ হাজার ৭৩২টি। সবগুলো কেন্দ্রেই ভোট গ্রহণ হবে ইভিএমে। নগরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার মো. সাগর হোসেন বলেন, ‘মেশিনে কোথায় ভোট দিলে কোথায় যাবে, তা ঠিক আছে নাকি! তারপরও কেন্দ্রের পরিস্থিতি ভালো থাকলে ভোট দিতে যাব।’

নগরের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার রেদওয়ানুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখন স্মার্ট পৃথিবীর বাসিন্দা। জীবনের প্রথম ভোট ইভিএমে দিতে পারব, এটা ভেবে ভালো লাগছে। তবে যাঁরা একটু বয়স্ক বা প্রযুক্তির ব্যবহার কম বোঝেন, তাঁদের জন্য একটু ঝামেলা মনে হতে পারে ইভিএম।’ ইভিএম নিয়ে আরও প্রচার দরকার ছিল মত দিয়ে তিনি বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে প্রচার-প্রচারণা খুব বেশি হয়নি। আমাদের ওয়ার্ডে এক দিন মাত্র এটা নিয়ে প্রচারণা হয়েছে। যাতে খুব কমসংখ্যক লোক হাজির ছিল। বিষয়টা নিয়ে আরও বেশি প্রচারণার দরকার ছিল।’

আবার ইভিএমে তিনটি ভোটের কোনো একটি না দিলে সব ভোট বাতিল হবে কি না, তা নিয়ে ভোটারদের মনে প্রশ্ন রয়েছে। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের একজন ভোটার বলেন, ‘আমি মেয়র পদে কাউকে ভোট দিতে চাই না। কিন্তু ওই পদে ভোট না দিলে অন্য দুই প্রার্থীর ভোট বাতিল হবে কি না, তা স্পষ্ট করে কেউ বলছে না।’

খুলনা সিটি নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৬ জন। পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮৩৩ জন। খুলনার নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ও কক্ষে কোনো অনিয়ম হচ্ছে কি না, তা দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করবে নির্বাচন কমিশন। এ জন্য মোট ২ হাজার ৩১০টি সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় থাকছে সব ভোটকেন্দ্র। আজ রোববার দুপুরে নগরের সোনাডাঙ্গার খুলনা বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স থেকে ইভিএমের সরঞ্জাম কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের ফোকাল কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান খান বলেন, ‘ভোটারদের ভোট দিতে যেন সমস্যা না হয়, সে জন্য বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভোটারদের ইভিএমে ভোট দেওয়ার বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বুথে আনসার সদস্য এবং পোলিং অফিসারের কাছে ব্যালট ইউনিটের মতো নমুনা ব্যালট থাকবে। যদি ভোট দিতে সমস্যা হয়, তখন কীভাবে ভোটটা দিতে হয়, তা ওনারা দেখিয়ে দেবেন।’  

ইভিএম নিয়ে খুলনার ভোটারদের মধ্যে বাড়তি উৎসাহ বা একেবারে অনাগ্রহ নেই জানিয়ে খুলনা নগর ছাত্রলীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সোহেল বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘খুলনার মানুষের ইভিএমে ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা আগে আছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-২ আসনের ১৫৭টি ভোটকেন্দ্রে ইভিএমে ভোট হয়েছিল। বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রচার-প্রচারণার সময় আমরা খেয়াল করেছি, সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ইভিএম নিয়ে তেমন কোনো উৎসাহ নেই। আবার ইভিএম নিয়ে হতাশা বা শঙ্কার কথাও ভোটাররা বলছেন না।’

খুলনায় সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি আইনজীবী কুদরত-ই-খুদা প্রথম আলোকে বলেন, ইভিএম নিয়ে ভোটারদের মধ্যে বরাবরই একটা সন্দেহ এবং অস্বস্তি ছিল। এবারও এর পরিবর্তন হয়নি। বরং সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হবে না অথচ সিটি নির্বাচনে ইভিএম কেন ব্যবহার করা হচ্ছে, তা নিয়ে সন্দেহ বেড়েছে। তিনি বলেন, ইভিএমে কখনোই সাধারণ ভোটাররা ভোট দিয়ে তৃপ্তি পান না। কারণ ভোটাররা ব্যালটে সিল মারলে বুঝতে পারেন ভোটটা কোথায় দিয়েছেন। মেশিনে চাপ দিয়ে বুঝতে পারেন না ভোটটা কোথায় গেল। যদি ভোট দেওয়ার পরপরই একটা কাগজের কপি বের হয়ে আসত, তাহলে তাঁদের সন্দেহ থাকত না।