ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ক্ষমতাসীনদের বাধা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীদের মোমবাতি প্রজ্বালন

মোমবাতি প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে প্রতিবাদ করেছে শিক্ষার্থীরা। আজ শনিবার সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ক্ষমতাসীন দলের বাধা উপেক্ষা করে মোমবাতি প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে গান গেয়ে ও মহাসড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

আজ শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে শহরের হালদারপাড়া, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বর ও ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, আজ সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে শিক্ষার্থীরা জেলা শহরের হালদারপাড়ার অন্নদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হন। সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক সুজন দত্তের নেতৃত্বে ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাঁদের বাধা দেন। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাঁদের কথা-কাটাকাটি হয়। পরে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন পৌঁছে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। শান্তিপূর্ণভাবে মোমবাতি প্রজ্বালন করে শিক্ষার্থীরা চলে যাবেন বললে সদর উপজেলার চেয়ারম্যান সম্মত হন। সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে অন্নদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে শিক্ষার্থী প্রত্যেকের হাতে মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানান।

এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘মুক্তির মন্দির সোপানতলে, কত প্রাণ হলো বলিদান’, ‘রক্ত লাল রক্ত লাল রক্ত লাল, বাঁধন ছেঁড়ার হয়েছে কাল’ ও জাতীয় সংগীতসহ চারটি গান গান। পরে শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে বিভিন্ন স্লোগানে মিছিল নিয়ে চলে যান। এতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁদের বাধা দেন। শিক্ষার্থীরা বাধা অতিক্রম করে শহরের পুরোনো জেলরোড এলাকায় কিছুক্ষণ অবস্থান নেন ও স্লোগান দেন। পরে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ধাওয়া দিলে তাঁরা সেখান থেকে সরে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থান নেন। তাঁরা প্রায় ২০ মিনিট মহাসড়ক অবরোধ করেন। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পৌঁছালে শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে সরে দাঁড়ান।

সন্ধ্যা সাতটার দিকে শহরের শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরে শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ অবস্থান নেন। তাঁরা শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরের মঞ্চে বসে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ প্রতিপাদ্যে জাতীয় পতাকা সামনে রেখে ও মোমবাতি জ্বালিয়ে গান গেয়ে নিহত, আহত শিক্ষার্থীসহ আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি জানান।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মোমবাতি প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে প্রতিবাদ করেছে শিক্ষার্থীরা
ছবি: প্রথম আলো

শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচি পালনের সময় সেখানেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। কর্মসূচি শেষ করে সেখান থেকে চলে যাওয়ার সময় আওয়ামী লীগের এক নেতা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে গিটার রেখে দেন এবং শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন হুমকি দেন। পরে আওয়ামী লীগের অন্য নেতাদের হস্তক্ষেপে গিটার ফিরে পান।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘কর্মসূচি শেষ করে ফিরে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নানা ধরনের হুমকি দিয়েছেন। এক একটা শিক্ষার্থীকে বাড়ি থেকে বের করে এনে হাত-পা গুঁড়িয়ে ফেলবে বলে তাঁরা হুমকি দেন। পুরোনো জেলরোড এলাকা থেকে ধাওয়া দিয়ে তাঁরা আমাদের সরিয়ে দিয়েছেন।’

জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবি প্রধানমন্ত্রী মেনে নিয়েছেন। নিহত শিক্ষার্থীদের হত্যার বিচার চেয়েছেন তাঁরা, যেটা আমরাও চাই। তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করতে চেয়েছেন এবং তাঁরা পেরেছেন। আমরা কোনো বাধা দিইনি।’

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসলাম হোসেন বলেন, ‘আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের শান্তভাবে নিজ নিজ অবস্থানে থাকতে বলেছি। শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করে চলে গেছেন।’