সন্তান প্রসবের দুই দিন পর হাসপাতালে বসে দিলেন পরীক্ষা
শরীয়তপুরে এক এইচএসসি পরীক্ষার্থী সন্তান প্রসব করে হাসপাতালে বসে পরীক্ষা দিয়েছেন। গত শুক্রবার রাতে তিনি শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে কন্যাসন্তান জন্ম দেন। এরপর রোববার তিনি ওই হাসপাতালের শয্যায় বসেই পরীক্ষায় অংশ নেন।
সন্তান জন্ম দেওয়া ওই শিক্ষার্থীর নাম ইশা আলম। তিনি শরীয়তপুর সদর উপজেলার তুলাশার গ্রামের মাহবুবুর রহমান ওরফে তুষেরের স্ত্রী। তিনি শরীয়তপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী। ইশা ও তাঁর নবজাতক কন্যা সুস্থ আছে। বিষয়টি জানিয়ে হাসপাতালের চিকিৎসক হোসনে আরা প্রথম আলোকে বলেন, এক শিক্ষার্থী মা হয়েছেন। মা ও শিশু সুস্থ আছেন। সুস্থ থাকার কারণে পরীক্ষায় অংশ নিতে পেরেছেন।
শরীয়তপুর সরকারি কলেজ সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগের ছাত্রী ইশা আলম গত বছর জুনে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। সদর উপজেলার তুলাশার গ্রামের মাহবুবুর রহমান তাঁর স্বামী। বিয়ের পর তিনি পড়ালেখা চালিয়ে যান। সন্তানসম্ভবা হওয়ার পর এইচএসসি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন। গত বৃহস্পতিবার তিনি শহরের গোলাম হায়দার খান মহিলা কলেজ কেন্দ্রে বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষায় অংশ নেন।
পরের দিন শুক্রবার সকালে তাঁর প্রসববেদনা উঠলে শহরের নিপুন ক্লিনিকে ভর্তি করান স্বজনেরা। রাতে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কন্যাসন্তান জন্ম দেন ইশা। তাঁর স্বজনেরা এ অবস্থার কথা জানিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রের কেন্দ্রসচিবের কাছে আবেদন করেন। ইশা আলমের পরের পরীক্ষা হাসপাতালে বসে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। এরপর রোববার হাসপাতালের বিছানায় বসে ওই শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ।
কেন্দ্রসচিব ও সরকারি গোলাম হায়দার খান মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. ওয়াজেদ কামাল বলেন, ‘এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর ইশা আলম নামের এক পরীক্ষার্থী সন্তান জন্ম দিয়েছে। ওই ছাত্রী হাসপাতালে বসে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অদম্য ইচ্ছার কথা জানতে পেরে আমরা এগিয়ে আসি। একজন শিক্ষক ও পুলিশের উপস্থিতিতে হাসপাতালের শয্যায় বসিয়েই তার পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।’
পরীক্ষার্থী ইশা আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পারিবারিক কারণে অল্প বয়সে বিয়ে করতে হয়েছে। সংসারজীবনে প্রবেশ করলেও পড়ালেখা চালিয়ে গেছি। পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা সাপোর্ট করেছেন। কন্যাসন্তান জন্ম দিয়ে আমি খুশি। পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চাই। চাকরি করে সন্তান ও পরিবারের জন্য স্বাবলম্বী হওয়ার ইচ্ছা আছে।’
ইশা আলমের স্বামী মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার স্ত্রী পড়ালেখা করে স্বাবলম্বী হতে চায়। আমিও তাকে বলেছি, পাশে আছি। তার অদম্য ইচ্ছাশক্তির কারণে প্রসববেদনা ভুলে পরীক্ষায় অংশ নিতে পেরেছে।’