৭৭তম জন্মবার্ষিকীতে হুমায়ূন আহমেদকে শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় স্মরণ
গাজীপুরের নুহাশপল্লী, নেত্রকোনার কেন্দুয়া ও সদর উপজেলায় পৃথকভাবে নানা আয়োজনে নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৭৭তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপিত হলো। আজ বৃহস্পতিবার মোমবাতি প্রজ্বালন, সমাধিতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ, কেক কাটা, দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে লেখককে স্মরণ করেন তাঁর পরিবার, স্বজন, ভক্ত ও পাঠকেরা।
প্রতিবারের মতো এবারও হুমায়ূন আহমেদের পরিবার, তাঁর ভক্ত, কবি-লেখক ও নাট্যজনেরা ফুল হাতে শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় করেন নুহাশপল্লীর লিচুতলায়।
এর আগে গতকাল বুধবার রাতে নুহাশপল্লীতে ১ হাজার ৭৭টি মোমবাতি প্রজ্বালন করা হয়। আজ সকালে লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, দুই ছেলে নিনিত হুমায়ূন ও নিষাদ হুমায়ূন কবর জিয়ারত করেন। এ সময় হুমায়ূন আহমেদের শুভানুধ্যায়ী ও ভক্তরা উপস্থিত ছিলেন।
হুমায়ূন আহমেদের স্বপ্নের ক্যানসার হাসপাতাল ও জাদুঘর নির্মাণে ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন বলেন, ‘স্বপ্ন দেখি এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে ধৈর্য ও শক্তি চাই। আমি মানসিক ও শারীরিক শক্তি চাই। আমি সৌভাগ্যবান, হুমায়ূন আহমেদের সৈনিকেরা যাঁরা আমার আশপাশে রয়েছেন, তাঁরা সবাই হুমায়ূন আহমেদ ও নুহাশপল্লীর শুরু থেকে রয়েছেন। আমরা হয়তো থাকব না, কিন্তু তাঁর সৈনিকেরা থাকবেন। একদিন এই সৈনিকেরাই হুমায়ূন আহমেদের স্বপ্ন পূরণ করবেন।’
এদিকে সকাল ১০টার দিকে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে লেখকের নিজ হাতে গড়া শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠে তাঁর জন্মবার্ষিকী উদ্যাপিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামান। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমদাদুল হক তালুকদার, সমাজসেবা কর্মকর্তা ও বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. ইউনুস রহমান, শিক্ষক তুহিন সরকার প্রমুখ।
এ ছাড়া ‘হিমু পাঠক আড্ডা’ নামের একটি সংগঠনের আয়োজনে বেলা ১১টার দিকে জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নেত্রকোনা শহরের ছোটবাজার এলাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শোভাযাত্রা বের হয়ে মোক্তারপাড়া মাঠের মুক্তমঞ্চে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে কেক কাটা ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভায় সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলপনা বেগমের পরিচালনায় হুমায়ূন আহমেদের জীবন ও কর্ম নিয়ে বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, পুলিশ সুপার মির্জা সায়েম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুখময় সরকার প্রমুখ। এরপর জেলা শিল্পকলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
জেলা প্রশাসক বলেন, হুমায়ূন আহমেদ একজন প্রকৃত শিল্পী ছিলেন বলেই রোদ, বৃষ্টি, মাটি, বাতাস ও প্রকৃতির ঘ্রাণ উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে শিল্প রচনা করেছেন বলেই তাঁর শিল্প এত সমৃদ্ধতম। তিনি একটি পাঠকসামাজ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আর তিনি শুধু পাঠকই তৈরি করেননি, একজন মানুষ হিসেবে যে ব্যাপকতা, তা তিনি জীবনভর ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন।
পুলিশ সুপার মির্জা সায়েম বলেন, স্বাধীনতা–উত্তর বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। তিনি জাদুকরের মতো গল্প, নাটক, উপন্যাস ইত্যাদি লিখে পাঠক তৈরি করেছেন। তাঁর লেখায় যাপিত জীবনের কোনো বিষয় বাদ যায়নি। আইনশৃঙ্খলার মধ্যে যে নানান অসংগতি আছে, তা-ও তিনি তাঁর লেখা বা নাটকে বলেছেন।
কেন্দুয়ার ইউএনও ইমদাদুল হক তালুকদার বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদ অবহেলিত এই এলাকার মানুষকে আলোর পথ দেখাতে নিজ হাতে বিদ্যালয় স্থাপন করেছেন। শহীদ স্মৃতি বিদ্যালয় নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন ছিল তাঁর।’
হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে তাঁর নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে। তাঁর বাবা ফয়েজুর রহমান ও মা আয়েশা ফয়েজ। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে তিনি নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।